[ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবি ও নাট্যকার ডেরেক ওয়ালকট (১৯৩০- ২০১৭) জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন ত্রিনিদাদে। ১৯৯২ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পান। নোবেল কমিটির মতে তাঁর পুরষ্কার ছিলো ‘একটি ঐতিহাসিক দর্শন দ্বারা টিকে থাকা দুর্দান্তভাবে আলোকিত কাব্যিক মহাকাশের জন্য, যা বহুসংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রতিশ্রুতিরই নমুনা। ‘তিনি ইউরোপীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বান্দ্বিকতা তুলে ধরেছেন, দাসত্ব থেকে স্বাধীনতার দীর্ঘ পরিক্রমার কথা বলেছেন।]
সেই বজ্রমুঠি
প্রথম ছোবলটা ছিলো হৃৎপিণ্ডেই –
একটু ছাড় দিতেই, বুক ভরে
নিলাম উজ্জ্বলতা,
কিন্তু আবারও শক্ত হলো মুঠি।
আমি কি কখনো ভালোবাসিনি
ভালোবাসার পাশের বেদনাকেই?
সেই প্রাক্তন প্রেম এখনো উন্মাদনার নাম –
উন্মাদেরাও সাক্ষ্য দিবে, বুঝিয়ে দিবে যুক্তিহীনতার স্তরবিন্যাস
কিংবা শোনাবে রসাতলে ঝাঁপ দেওয়া আর্তনাদ।
হে হৃদয়, বেঁচে থাকবার খাতিরে অন্তত
শান্ত থাকো অতএব।
ভালোবাসার পর
এমন সময় আসবে
যখন আপনি নিজের ঘরের দরোজায় পৌঁছতে পারলেই
জয়োল্লাসে নিজের পিঠ চাপড়ে দিবেন,
ঘরের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে
স্বাগত মুচকি হাসি বিনিময় করবেন।
নিজের অচেনা চেহারাটিকে আর একবার ভালোবাসবেন।
তাকে দিন সুরা, রুটি, ফিরিয়ে দিন হৃদয় – যে আগন্তুক
আপনাকে সারা জীবন ভালোবেসে গেছে – আত্মপ্রেমে,
যাকে আপনি উপেক্ষা করেছেন অন্য কারো আশায়,
তার চেয়ে ভালো কে আর বুঝে আপনাকে বলুন!
বইপত্রের আড়ালে লুকানো প্রেমপত্রগুলো
নামিয়ে ফেলুন – গোপন ছবিটবি, মরিয়া হয়ে লেখা ডায়েরির পাতা!
আয়না থেকে নিজের মুখের খোসাটিকে ছাড়িয়ে নিন
ডিমসেদ্ধর মতো;
বসুন তো আরাম করে।
জীবনের উৎসবে মাতুন!
অন্ধকার আগস্ট
এত বৃষ্টি ঝরছে, এই অন্ধকার আগস্টে, আকাশ স্ফীতোদর
এটাই এখন জীবন।
সূর্য আমার বোন, তার হলুদ নির্জন ঘরে বিষাদ-বন্দি।
চুলোয় যাক সব, পর্বতের চূড়া থেকে
কেটলির বাষ্প বেরুচ্ছে, নদীতে ডেকেছে বান;
তবু অভিমানী সূর্য আমার বোন
বৃষ্টি থামাতে এলো না।
সে তার ঘরে, আপন মনে, পছন্দের পুরনো জিনিসপত্র
ঘাঁটাঘাঁটি করছে এই ফাঁকে –
আমার কবিতা, ছবির এলবাম;
কাচভাঙা বজ্রপাতেও নির্বিকার।
সে স্বেচ্ছাবন্দি।
তুমি নিশ্চয়ই জানো যে তোমাকে ভালোবাসি,
কিন্তু বৃষ্টির বিষয়ে নিরুপায়। বরং শিখে নিচ্ছি
অন্ধকার দিনগুলোকে ভালোবাসতে, ধোঁয়া ওঠা পাহাড়গুলোকেও,
মশককুলের গালগল্পে ভরা বাতাস,
চিরতা ভেজানো জলের মতো তিতকুটে ওষুধের চুমুক।
অতএব, হে আমার ভগ্নি, তুমি যখন মেঘের ফাঁকে
বৃষ্টির পুঁতিগুলো সরিয়ে বেরিয়ে আসবে,
হাজার ফুলে ভরা মস্তক আর দয়ার্দ্র দু চোখ নিয়ে
সবকিছু তো আর আগের মতো থাকবে না (দেখছই তো
ওরা আমাকে আগের মতো ভালোবাসতেও দিবে না)
তবু এ কথা সত্যি হে ভগ্নি আমার –
আমি উজ্জ্বল দিনের মতো অন্ধকার দিনকেও ভালোবাসতে শিখব,
গাঢ় বৃষ্টির ধারা, শাদা পাহাড় –
যেমন করে এক সময় ভালোবাসতাম
নিজের সুখটুকু আর তোমাকে।