Pratiswik
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
Pratiswik
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
OneHost BD
হোম অনুবাদ
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পদ্ধতি

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পদ্ধতি

মাহবুব বোরহান মাহবুব বোরহান
জুলাই ৪, ২০২০
বিভাগ : অনুবাদ, বিশেষ সংখ্যা
608
Views
ফেসবুকটুইটারহুয়ার্ট্সঅ্যাপলিংকইন্ডই-মেইল

[থমাস হেনরি হাক্সলি (THOMAS HENRY HUXLEY : 1825-1895) ছিলেন একজন অসামান্য ভিক্টোরিয়ান। সবকিছুর প্রতিই তার আগ্রহ ছিলো; শিক্ষা, ধর্ম, রাজনীতি এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানে। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, শৈল্য চিকিৎসক, শরীরবিদ্যা বিশারদ, ভ্রুণবিশেষজ্ঞ , সমাজবিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানের দার্শনিক (philosopher of science)।  কিন্তু তিনি সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে আছেন বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ সমর্থক ও বিজ্ঞানের জনপ্রিয়তা সৃষ্টিতে নিবেদিতপ্রাণ একজন মানুষ হিসেবে। তিনি এমন একটা সময়ে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তুলতে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন যখন বিজ্ঞান কী বলতে গেলে এটা কেউ বুঝতোই না। পুরো বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানের প্রতি তখন কারো তেমন কোনো গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তিও ছিলো না। উপরন্তু তখন বিজ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিকে অত্যন্ত ব্যাপকভাবে শয়তানের দালাল (agent of Mephisto) [Mephisto : a devil in medieval mythology and the one to whom Faust sold his soul in Faust legend.] বলে বিবেচনা করা হতো। তিনি চার্লস রবার্ট ডারউইন (১২.০২.১৮০৯-১৯.০৪.১৮৮২)’র বিবর্তনবাদকে বিশ্লেষণ করে এই মতবাদের পক্ষে তাঁর দৃঢ় সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন। হাক্সলি ম্যাথু আর্নল্ড (১৮২২- ১৮৮৮)’র সাথে বিজ্ঞান ও শিক্ষা নিয়ে বাগযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন; বিজ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে বিতর্কে মেতেছিলেন ব্রিটিশ রাজন্য গ্লাডস্টোন (Gladstone) এর সাথেও। প্রবন্ধটি জনপ্রিয় বিজ্ঞানের ধ্রুপদী গ্রন্থ Darwiniana (1893-1894) তে সংকলিত হয়েছে।]

১.

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পদ্ধতি আসলে মানুষের মনের ক্রিয়াশীলতার প্রয়োজনীয় প্রণালী বা ধরনের (mode) প্রকাশ  ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি পরিপূর্ণভাবে এমন একটি নির্দিষ্ট প্রণালী যার সাহায্যে সকল ঘটনার যথাযথ এবং নির্ভুল কারণ সন্ধান করা যায়। বিস্কুট তৈরিতে  একজন বিস্কুট প্রস্তুতকারীর কাজে ও জুতা সেলাইয়ে একজন মুচির কাজে এবং একজন রসায়নবিজ্ঞানীর কঠিন ও জটিল বিশ্লেষণ এবং চূড়ান্তভাবে নিক্তির সাহায্যে ওজন নিরুপণের মাধ্যমে ফলাফল নির্ণয়ের কাজে মানসিক ক্রিয়াপদ্ধতির ধরনের যে পার্থক্য; একজন বৈজ্ঞানিকের (Man of Science) মানসিক ক্রিয়া পদ্ধতির ধরনের সাথে একজন সাধারণ মানুষের মানসিক ক্রিয়াপদ্ধতির ধরনের  এর চেয়ে ভিন্ন কোনো পার্থক্য নেই। ব্যাপারটা এমন নয় যে দাঁড়ি-পাল্লার কাজ (action of the scales) এক রকম আর নিক্তি (balance)’র কাজ অন্য রকম; পার্থক্যটা হলো তাদের কাজের ঢং বা পদ্ধতি (manner) অথবা  মূলতত্ত্ব বা সূত্রের (principles) সংগঠনের; কিন্তু একজনের (দৃষ্টিভঙ্গির) কড়িকাঠ  (beam) অসংখ্য শ্রেষ্ঠতর অক্ষের (finer axis) ওপর প্রতিষ্ঠিত যা অবশ্যসম্ভাবীভাবেই অন্য জনের পরিমাপ থেকে তার পরিমাপকে ভিন্নতর দিকে মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

২.

মনে হয় পরিচিত জগৎ থেকে কিছু উদাহরণ দিলে বিষয়টি আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। আপনারা হয়তো অনেকবার শুনেছেন তারপরও আমি বলতে  চাই যে বৈজ্ঞানিকেরা আরোহ (Induction) এবং অবরোহ (Deduction) এই দুই পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করেন। ক্ষুদ্রতর অর্থে এই দুই ক্রিয়াপদ্ধতির সাহায্যে কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রকৃতিকে নিংড়িয়ে তার থেকে সুনির্দিষ্ট অন্য জিনিস বা বিষয়সমূহ বের করে আনা যাকে বলা হয় প্রকৃতির নিয়ম বা সূত্র বা প্রাকৃতিক কারণ; আর এগুলো থেকে কিছু মানুষ তাদের নিজস্ব চৌকশ দক্ষতার মাধ্যমে প্রকল্প (hypotheses) ও তত্ত্ব (theories) নির্মাণ করেন। অনেকেই ভাবেন যে এই সকল মানুষের মনের এই রকম ক্রিয়াপদ্ধতির সাথে সাধারণ মানুষের মনের ক্রিয়াপদ্ধতির কোনো তুলনা চলে না। এমন দক্ষতা বা এই শিল্পকৌশল অর্জনের জন্য তাদের বিশেষ এক ধরনের শিক্ষানবিশতার প্রয়োজন হয়েছে । এই সমস্ত বড়ো বড়ো শব্দ শুনে আপনারা হয়তো চিন্তা করবেন যে একজন বৈজ্ঞানিকের মন তার সহযোগী বা সমকালীন অন্য মানুষদের থেকে ভিন্নভাবে গঠিত। কিন্তু আপনি যদি এই সমস্ত বিশেষ ভারী ভারী শব্দ বা বাচ্যে ভীত না হন তা হলে দেখবেন আপনিও এটা উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন যে আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল; আর এই সমস্ত ভয়ানক যন্ত্রপাতি প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে আপনার জীবনে আপনিও ব্যবহার করে আসছেন।

৩.

মলিয়্যের (Molie*re) এর একটি নাটকের [1.one of Moliere’s plays: Le Bourgeois Gentilhomme (1670), II.vi. ‘Moliere’ is the pseudonym of Jean Baptiste Poquelin (1622-1673; French comic playwright).] খুব পরিচিত একটি ঘটনা যেখানে নাট্যকার নায়ককে [2. the hero : M. Jourdain] দিয়ে অসীম আনন্দে এই কথা বলিয়েছেন যে তিনি তার সম্পূর্ণ জীবন ভরেই এই রকম গদ্য বলে আসছেন। একই ভাবে আমি বিশ্বাস করি, আপনারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন এবং এটা আবিষ্কার করে নিজেদের মধ্যে পুলকিত হবেন যে, আপনারা নিজেরাই একই সময়ে দর্শনের [3. philosophy : logic] অবরোহ ও আরোহ সূত্র অনুসারে কাজ করে চলেছেন। সম্ভবত এখানে এমন একজনও নেই যিনি তার সারা দিনের ঘটনাপ্রবাহে অসংখ্য কার্যকারণের জটিল প্রবণতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হন না। সম্পূর্ণ একই প্রকারে  যদিও মাত্রাগতভাবে তা ভিন্ন, একজন বৈজ্ঞানিক প্রাকৃতিক ঘটনাসমূহের কারণ শনাক্ত করণের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হন।

৪.

বিষয়টিকে একটি অতি নগণ্য ঘটনার উদাহরণের সাহায্যে তুলে ধরা যায়। মনে করুন আপনি একজন ফল বিক্রেতার দোকানে গিয়ে একটি আপেল চাইলেন; আপনি একটি আপেল তুলে নিলেন, নিয়ে আপেলটিতে কামড় দিলেন, দেখলেন এটি টক। আপনি আপেলটির দিকে তাকালেন এবং দেখলেন যে এটা শক্ত ও কাঁচা। আপনি অন্য আরেকটি তুলে নিলেন সেটিও শক্ত, কাঁচা এবং টক। দোকানদার আপনাকে তৃতীয় আরেকটি আপেল দিলো; কিন্তু কামড় দেয়ার আগেই আপনি এটিকে পরীক্ষা করলেন এবং দেখলেন এটা শক্ত এবং কাঁচা। আপনি সাথে সাথে দোকানদারকে বললেন আপনি এটি নেবেন না, কারণ পূর্বে যেগুলো আপনি পরখ করে দেখেছেন এটিও সেগুলোর মতোই টক হবে।

৫.

আপনার চিন্তা প্রক্রিয়ার মতো কোনো কিছুই আর এতো সরল হতে পারে না। কিন্তু যদি আপনি এই প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করার কষ্ট সহ্য করেন এবং এর যৌক্তিক উপাদানসমূহকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন, যা মনের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে তা হলে আপনি অপার বিস্ময়ে বিস্মিত হবেন। প্রথম ক্ষেত্রে আপনি আরোহী কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। আপনি দেখতে পেলেন যে দুইটি অভিজ্ঞতাই শক্তত্ব এবং কাঁচাত্ব একসাথে আপেলের মধ্যে টকত্ব হিসেবে আছে। প্রথম ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমনই ছিলো এবং দ্বিতীয়টি দ্বারা এটি নিশ্চিত হয়েছে। সত্য যে, এটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র ভিত্তি, কিন্তু এখন পর্যন্ত এটাই একটি আরোহী কাঠামো (Induction form) তৈরির জন্য যথেষ্ট। আপনি ঘটনা (fact)’র সাধারণীকরণ করেছেন, আপেলে যেখানেই শক্তত্ব এবং কাঁচাত্ব পান সেখানেই টকত্ব আশা করেন। আপনি একটি সাধারণ সূত্র দেখতে পান যে সকল শক্ত ও কাঁচা আপেলই টক। আর আপনার ঘটানো এই পুরো ঘটনাটুকুই হলো একটি যথার্থ আরোহ। বেশ একই ভাবে প্রাকৃতিক সূত্র পাবার জন্য, যখন আপনাকে আরেকটি আপেল প্রদান করা হয়, আপনি দেখেন যেটি শক্ত এবং কাঁচা, আপনি বললেন ‘সকল শক্ত এবং কাঁচা আপেলই টক; এই আপেলটি শক্ত এবং কাঁচা অতএব এটিও টক।’ কারণসমূহের এমন প্রবণতা বা গতিধারাকেই যুক্তিবিদেরা বলেন ‘সিলোজিজম’ (syllogism) এবং এর সবকিছুরই নানা রকম অংশ এবং পদ (terms) আছে, আছে প্রধান প্রতিজ্ঞা (major premiss), অপ্রধান প্রতিজ্ঞা (minor premiss) এবং উপসংহার (conclusion)।  আরো অতিরিক্ত অনেক কারণের সাহায্যে যেখানে আরো দুই বা তিনটি সিলোজিজমের অবতারণা ঘটতে পারে যার জন্য আপনি আপনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন, ‘আমি আপেল নেবো না।’  সুতরাং আপনি দেখলেন প্রথম পর্বে আপনি আরোহ পদ্ধতির সাহায্যে একটি সূত্র (Law) প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তার উপর ভিত্তি করে আপনি একটি অবরোহী সূত্র পেলেন, যার দ্বারা একটি বিশেষ নির্দিষ্ট ঘটনার কারণ উদঘাটন করতে সক্ষম হলেন। এখন মনে করেন এভাবে আপনি আপনার সূত্রের উপসংহার পেলেন। আর এর কিছু সময় পরে আপেলের গুণ নিয়ে আপনার এক বন্ধুর সাথে আলোচনা কালে আপনি তাকে বললেন, ‘এটা খুবই কৌতূহলজনক ব্যাপার যে, আমি দেখলাম সকল শক্ত এবং কাঁচা আপেলই টক।’ আপনার বন্ধু আপনাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিন্তু তুমি কীভাবে সেটা জানলে?’ আপনি তাৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন, ‘ওহ্, কারণ আমি অনেক বার তাদের পরীক্ষা করে দেখেছি এবং সব সময়ই দেখেছি শক্ত এবং কাঁচা আপেল টক।’ বেশ, এখন যদি আমরা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের পরিবর্তে বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলি; তা হলে ওটাকে আমরা বলবো একটি নিরীক্ষামূলক পরিবর্তনশীল সূচক (experimental verification)।  তারপরও যদি সে দ্বিমত পোষণ করে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে, আপনি আরো অগ্রসর হয়ে বলবেন, ‘আমি সামারসে (ট) শ্যায়ার (Somersetshire) ও ডেভোনশ্যায়ার (Devonshire) যেখানে প্রচুর পরিমাণে আপেল উৎপন্ন হয় সেখানকার লোকের কাছে শুনেছি তারাও তাদের নিরীক্ষায় একই ফলাফল পেয়েছে। নরমানডি (Normandy) এবং উত্তর আমেরিকার ক্ষেত্রেও একই রকম দেখা গেছে। সংক্ষেপে বলা যায়, আমি এটা দেখেছি যে এই বিষয়ে যেখানেই দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এটা মানুষের একটা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা।’ আপনার বন্ধু যদি প্রচণ্ড যুক্তিবিরোধী লোক না হন, আপনার সাথে তিনি সহমত পোষণ করবেন এবং আপনি যে উপসংহার টেনেছেন এটা যে সম্পূর্ণ ঠিক তা মেনে নিতে রাজি হবেন।  তিনি বিশ্বাস করেন, যদিও হতে পারে তিনি জানেন না যে তিনি এটা বিশ্বাস  করেন, যে আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা যাচাই-বাছাই আছে, যা সচরাচর অবলীলায় করা হয়; এবং তাতেও ঐ একই ফল পাওয়া যায়, যতো বেশি অবস্থার তারতম্যের মধ্যে একই ফল পাওয়া যায়; শেষ পর্যন্ত উপসংহারে সিদ্ধান্তও ততো বেশি সুনির্দিষ্ট হয় তখন আর তিনি প্রশ্ন তুলে বিরোধিতা করেন না। তিনি অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে স্থান-কাল-পাত্র সকল প্রকার অবস্থা বা পরিপ্রেক্ষিতের ভিত্তিতেই পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সকল ক্ষেত্রেই একই ফলাফল পাওয়া গেছে। অতএব তখন তিনি আপনার সাথে বলেন ‘যে সূত্র তুমি উদঘাটন করেছো তা নিঃসন্দেহে অনন্য’ এবং অতঃপর তিনি তা বিশ্বাস করেন।

৬.

বিজ্ঞানেও আমরা একই কাজ করে থাকি। বৈজ্ঞানিকেরা [4. Philosopher : scientist (‘man of science,’ ‘scientific man’)] একই বিষয়সমূহ আরো উন্নত বিকশিত ও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্ভুলভাবে অনুশীলন করেন। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে সম্ভাব্য সকল প্রকার নিরীক্ষায় একটি প্রতিপাদ্য সূত্রকে তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের ব্যাপার হয়ে পড়ে। উপরন্তু আরো সর্তকতা অবলম্বন করতে হয় এই কারণে যে, এটি সচেতনভাবেই করা হয়, নিছক কোনো দৈব দুর্ঘটনার ব্যাপার বলে এড়িয়ে যাওয়া হয় না, যেমনটি ঘটেছে আপেলের ঘটনায়। বিজ্ঞানেও সাধারণ জীবনের মতো কোনো সূত্রের ওপর আমাদের আস্থা হলো বিভিন্ন রকম নিরীক্ষার পরীক্ষালব্ধ ফলাফলে হেরফেরের অনুপস্থিতির যথার্থ অনুপাত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি আপনার হাতে আকড়ে ধরা কোনো বস্তুকে পড়তে দেন তা হলে তৎক্ষণাৎ তা মাটিতে পড়ে যাবে। যা প্রকৃতির সবচেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত সূত্রসমূহের একটির অতি পরিচিত একটি নিরীক্ষা; সূত্রটি হলো মাধ্যাকর্ষণের সূত্র। যে পদ্ধতির সাহায্যে বিজ্ঞানীরা ঐ মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, ঠিক একই পদ্ধতির সাহায্যে আমরা শক্ত ও কাঁচা আপেলের টকত্ব সম্পর্কের তুচ্ছ অনুপাতকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। কিন্তু আমরা এটাকে (মাধ্যাকর্ষণ সূত্রকে) এমন ব্যাপক ও সংকোচহীনভাবে বিশ্বাস করি কারণ মানুষ বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা দিয়ে এটিকে যাচাই করেছে এবং আমরা আমাদের নিজেদের দ্বারাও এটা যে কোনো সময় যাচাই করতে পারি; আর এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী সম্ভবপর ভিত্তি যার ওপর নির্ভর করে যে কোনো প্রাকৃতিক সূত্র বা নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বা টিকে থাকতে পারে।

৭.

এতোকিছুর পরও বিজ্ঞানে সূত্র প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি প্রমাণের প্রক্রিয়া যেমনটি সাধারণ জীবনে ঘটে থাকে ঠিক তেমন-ই। চলুন এখন একটি ভিন্ন ঘটনার দিকে আমাদের দৃষ্টির মোড় ঘোরানো যাক (যদিও বাস্তবিকভাবেই এটি কিন্তু একই প্রশ্নের অন্য পর্ব); সেটি হলো, সেই পদ্ধতি যার সাহায্যে, কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার সম্পর্ক থেকে, আমরা প্রমাণ করে থাকি যে কোনো কিছু তার অবস্থানে দাঁড়িয়ে থেকে অন্যদের অবস্থানেরও কারণ হয় (অথবা বলা যায়,অন্য কিছুর কারণেই কোনো কিছু তার অবস্থানে অবস্থান করে)।

৮.

প্রথমে ঘটনাটি আমি পরিষ্কারভাবে আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চাই। তারপর অন্য আরেকটি পরিচিত উদাহরণ দিয়ে দেখাবো আমি আপনাদেরকে কী বোঝাতে চাই। মনে করেন আপনাদের মধ্যে কেউ একজন সকালে আপনার ড্রয়িং রুমে আসলেন, এসে দেখলেন গত সন্ধ্যায় কক্ষটিতে ফেলে রাখা একটি চা-পাত্র ও কিছু চামচ নেই। কিন্তু জানালা খোলা এবং আপনি দেখলেন জানালার ফ্রেমে একটি নোংরা হাতের দাগ লেগে আছে, আপনি সম্ভবত এসবের পরও আরো দেখলেন কক্ষের বাইরে মাটিতে কাটাওয়ালা জুতোর ছাপ পড়ে আছে। এই সমস্ত বিষয় সাথে সাথে আপনার মনকে নাড়া দিল; দুই সেকেন্ড অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই আপনি বলে উঠলেন, ‘ওহ, কেউ মনে হয় জানালা ভেঙে কক্ষে ঢুকেছিল এবং চা-পাত্র ও চামচগুলো চুরি করে পালিয়েছে।’ ঐ কথা এক মুহূর্তের মধ্যেই আপনার মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে, এবং সম্ভবত আপনি আরো যুক্ত করবেন, ‘আমি জানি সেখানে আছে, আমি এটা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত।’ আপনি যা জানেন তা আপনি ঠিক ঠিক ভাবে বোঝাচ্ছেন; কিন্তু বাস্তবিকভাবে সকল জরুরি অনুষঙ্গ দিয়ে আপনি আপনার অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন যেটি আসলে একটি প্রকল্প (hypothesis)। আসলে মোটের উপর আপনি এটা জানেন না; এটা একটা প্রকল্প ছাড়া কিছুই না, যা অতি দ্রুত আপনার মনের মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। আর এটা একটা প্রকল্প, যা অবরোহ ও আরোহর চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে পাওয়া যায়।

৯.

 সেই অবরোহ এবং আরোহগুলো কী? এবং কীভাবে আপনি এই প্রকল্প পেলেন? প্রথম ক্ষেত্রে আপনি দেখলেন যে, দরজা খোলা; কিন্তু একটি সিরিজ কারণ দ্বারা বহু অবরোহ ও আরোহ সংযুক্ত করে, আপনি সম্ভবত একটি সাধারণ সূত্রের অনেক পেছনে অবস্থান করবেন, এটা ভালোই বোঝা যায় যে জানালা নিজে নিজে খুলে যায়নি; অতএব আপনি উপসংহার টানবেন কোনো কিছুতে জানালা খুলেছে। একইভাবে আপনি দ্বিতীয় সাধারণ সূত্রে পৌঁছবেন যে চা-পাত্র ও চামচ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জানালার বাইরে যায়নি এবং আপনি এতে সন্তুষ্ট যে সেগুলোকে আপনি যেখানে রেখে গিয়েছিলেন সেগুলো এখন সেখানে নেই; সেগুলোকে সরানো হয়েছে। তৃতীয়ত, আপনি এখনো জানালায় দাগ ও বাইরে জুতোর ছাপ দেখতে পাচ্ছেন এবং অতীতের সকল অভিজ্ঞতা থেকে আপনি বলবেন যে এই রকম দাগ মানুষের হাত ছাড়া অন্য কোনো কিছুর পক্ষে করা সম্ভব নয়; একই অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীই হবনেইল যুক্ত জুতো পরে না, যা কাঁকরের মধ্যেও ওরকম ছাপ সৃষ্টি করবে। আমি জানি না, যদিও আমরা যদি ঐ সমস্ত হারিয়ে যাওয়া যোগসূত্রের [5. missing links’ : intermediate forms undiscovered but assumed (or hypothesized) to exist in the ivolutionary process (or chain)] একটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই যাদের সম্পর্কে বলা হলো, যা আমাদের অন্য কোনো উপসংহারের জন্য সাহায্য করতে পারে। যে কোনো মূল্যেই আমাদের বর্তমান প্রয়োজনে বর্তমানের অভিজ্ঞতালব্ধ সূত্রই যথেষ্ট শক্তিশালী; আপনি তারপর উপসংহারে পৌঁছবেন যে, এই ধরনের কোনো দাগ মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীই তৈরি করে যায়নি; মানুষের হাত এবং জুতো ছাড়া আর কোনো কিছুই অন্য কোনো ভাবেই এমন দাগ সৃষ্টির জন্য দায়ী নয়। প্রশ্ন উদ্রেককারী চিহ্নটি একজন মানুষের দ্বারা ওভাবে তৈরি হয়েছে। আপনার আরো একটি সাধারণ সূত্র আছে, যা নিরীক্ষায় এবং অভিজ্ঞতায় পাওয়া গেছে, এবং যে, সেটিও হলো আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি অত্যন্ত বৈশ্বিক এবং অমোচনীয় একটি; তা হলো : কিছু মানুষ চোর। সাথে সাথে এই সমস্ত অবস্থা থেকে আপনি ধারণা করবেন ; এবং এটাই তাই, যা আপনার প্রকল্পকে সংগঠিত করবে; যে লোকটি বাইরে এবং বন্ধ জানালায় দাগ সৃষ্টি করেছে, সে-ই  জানালা খুলেছে এবং কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেছে এবং আপনার চা-পাত্র ও চামচগুলো চুরি করেছে; এতোক্ষণে আপনি মূল কারণের [6. vera causa : real cause] কাছে পৌঁছলেন। আপনি একটি কারণ অনুমান করেছেন, যা অত্যন্ত সরল, যা এই সকল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ঘটনা থেকে উৎপন্ন হতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম। আপনি শুধুমাত্র একজন চোরের প্রকল্প দিয়ে সংঘটিত এই সমস্ত ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারেন। কিন্তু ওটা একটি প্রকল্পাত্মক উপসংহার, যার ন্যায়গত ভিত্তির কোনো পরম প্রমাণ মোটের ওপর আপনার কাছে নেই; এটি কেবল এক সারি অবরোহ ও আরোহ কেন্দ্রিক কারণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে ব্যাখ্যা করে।

১০.

আপনার প্রথম ঘটনাটিতে মনে করা হলো আপনি একজন কাণ্ড জ্ঞানসম্পন্ন সাধারণ মানুষ এবং আপনি আপনার নিজের পরিতৃপ্তির জন্যই এই প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন; এটা খুবই স্বাভাবিক যে আপনি পুলিশের কাছে যাবেন এবং আপনার সম্পদ উদ্ধারের জন্য তাদেরকে সিঁধেল চোর কাজটি করেছে বলে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু যখনই আপনি এই কাজটি শুরু করেছেন অমনি একজন লোক আপনার কাছে আসলো এবং আপনি কী করতে যাচ্ছেন শুনে বললো, ‘সুবোধ বন্ধু তুমি খুব বড়ো একটি সিদ্ধান্ত অতিদ্রুত নিতে যাচ্ছো। তুমি কীভাবে জানলে, যে একজন লোকই এই হাতের ও জুতোর দাগগুলো তৈরি করেছে, আর সে-ই চা-পাত্র ও চামচগুলো নিয়েছে? এটা হতে পারে যে একটি বানরে সেগুলো নিয়েছে এবং লোকটি তারপর ওটা বেশ পরে দেখেছে।’ আপনি সম্ভবত উত্তর দেবেন, ‘বেশ, ভালো খুব ভালো, কিন্তু তুমি দেখো চা-পাত্র ও চামচ কোনো বিমূর্ত কিছু নয়, এটা সকল অভিজ্ঞতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তাই যেকোনো ভাবেই তোমার অনুমান আমার অনুমানের চাইতে কম সম্ভাবনাপূর্ণ।’ যখন আপনি এই বিষয়ে এভাবে কথা বলছিলেন, তখন আপনার অন্য আরেকজন বন্ধু এলেন যিনি একজন ভালো প্রকৃতির মানুষ যেমনটি অল্প কিছুক্ষণ আগে আমি বলেছিলাম। তিনি হয়তো বলবেন, ‘ওহ্! প্রিয় বন্ধু, তুমি অত্যন্ত পূর্বধারণাপ্রবণ লোক। তুমি স্বীকার করবে যে এই সমস্ত ঘটনাই ঘটেছে যখন তুমি গভীরভাবে ঘুমোচ্ছিলে; তখন কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে কিছু জানা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি কীভাবে নিশ্চিত হলে যে প্রাকৃতিক নিয়ম রাতের বেলায় স্থগিত ছিলো না? হতে পারে কোনো অতিপ্রাকৃতিক কিছুর হস্তক্ষেপ এক্ষেত্রে ঘটেছে।’ প্রকৃতপক্ষে তিনি ঘোষণা করছেন যে, তোমার প্রকল্প সেগুলোরই একটি যা দিয়ে তুমি মোটের ওপর সত্যের সবটুকুর প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম নও, আর সে কারণেই তুমি কোনোভাবেই নিশ্চিত হতে পারো না যে প্রাকৃতিক নিয়মগুলো তোমার ঘুম এবং জাগরণের সময় অভিন্ন থাকে।

১১.

 বেশ, এখন এই মুহূর্তে আপনি এরকম কারণের উত্তর দিতে পারবেন না। আপনি অনুভব করবেন যে আপনার করিৎকর্মা বন্ধু আপনাকে একটা অসুবিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আপনি আপনার মধ্যে অত্যন্ত নিঁখুতভাবে নিজের মনকে নিজে বোঝাবেন যেকোনো ভাবেই হোক আপনি সম্পূর্ণ সঠিক এবং আপনি তাকে তখন বলবেন, ‘সুবোধ বন্ধু, আমি শুধু ঘটনার প্রাকৃতিক সম্ভাব্যতা দিয়েই পরিচালিত হতে পারি, তুমি দয়া করে সরে দাঁড়াও এবং আমাকে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে বাধ্য করো। আমি পুলিশের কাছেই যাবো।’ ধরে নেয়া হলো আপনার উদ্দেশ্য হাসিল হলো এবং সৌভাগ্যক্রমে একজন পুলিশের সাথে আপনার সাক্ষাৎ ঘটলো; অবশেষে সিঁধেল চোরকে আপনার সম্পদসহ পাওয়াও গেলো এবং তার হাত ও জুতোর দাগ বিষয়টিকে পরিষ্কার করে দিলো। সম্ভবত কোনো বিচারক ঐ সমস্ত ঘটনাকে আপনার প্রকল্পের একটি সুন্দর নিরীক্ষামূলক নির্ধারক হিসেবে বিবেচনা করবেন, এবং আপনার ড্রয়িং রুমে ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক ঘটনাসমূহ আমলে নিয়ে তিনি সে অনুসারে কাজ করবেন।

১২.

এখন এই অনুমেয় বিষয়টিকে আমি অত্যন্ত সাধারণ ধরনের ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করছি। আপনি যদি কষ্ট করে এটাকে সতর্কতার সাথে বিশ্লেষণ করেন তা হলে দেখবেন একটি সাধারণ কারণের প্রক্রিয়ার মধ্যে কত ভিন্ন ধরনের পর্যায় থাকে। যে সমস্ত ঘটনা আমি বর্ণনা করেছি, আপনারা দেখবেন, যেকোনো বোধসম্পন্ন মানুষকেই  যারা মানসিকভাবে এটার সাথে যুক্ত, তাদেরকে এমন একটি উপসংহারের দিকে চালিত করবে যা চৌর্যবৃত্তিকে পরিহার এবং অপরাধীকে শাস্তি প্রদানে সহায়তা করবে। আমি বলতে চাই যে, এ ক্ষেত্রে, আপনার উপসংহারের জন্য আপনিও ঠিক একই রকম কারণের সিরিজের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হবেন; যেমন একজন বিজ্ঞানী তার ক্ষেত্রে বার বার ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ থেকে মূল উৎস এবং সূত্র আবিষ্কার করেন। প্রক্রিয়াটি অতি অবশ্যই সর্বদা একই রকম; এবং নির্ভুলভাবে কারণের এই একই প্রক্রিয়া নিউটন [7. Newton : Sir Isaac Newton (1642-1727; English physicist and mathematician).]  ও ল্যাপলাচ [8. Laplace : Marquis Pierre Simon de Laplace (1749-1927; French astronomer and mathematician)] তাদের আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন এবং গ্রহ-উপগ্রহের চলমানতার কারণ নির্দিষ্ট করেছিলেন, যেমন চোরকে শনাক্ত করার জন্য আপনি আপনার কাণ্ডজ্ঞানকে প্রয়োগ করেছিলেন। একমাত্র পার্থক্য হলো, অনুসন্ধানের প্রকৃতিটা অনেক বেশি নিগূঢ় দুর্বোধ্য, প্রতিটি পদক্ষেপে তাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে, যাতে প্রকল্পের মধ্যে কোনো ফাঁক-ফোকর বা ত্রুটি-বিচ্যুতি না থাকে। একটি ক্ষুদ্র ফাঁক বা ত্রুটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অজস্র ঘটনায় আমাদের সিদ্ধান্তের সঠিকতা নিরূপণে হয়তো কখনো তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না; কিন্তু একটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে, একটি ভুল যুক্তি তা ছোটো-বড়ো যেমনই হোক, সব সময়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এবং যদি কোনো মারাত্মক ফলাফল না পেতে চাই তাহলে এক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত নিরন্তরভাবে অনিষ্টকর কিছুর সৃষ্টি হয়নি এ সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে হবে ।

১৩.

একটি প্রকল্প সহজভাবেই অবিশ্বাস্য কারণ এটি একটি অনুমান এরকম মনে কারে কখনোই নিজেকে কোনো গতানুগতিক মনেবৃত্তিতে ভুলভাবে পরিচালিত করার মানসিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। কিছু বৈজ্ঞানিক উপসংহারের ক্ষেত্রে কখনো কখনো এমন যুক্তিও তুলে ধরা হয় যে মোটের উপর এটা একটা অনুমান মাত্র। কিন্তু নবম ও দশম স্তবকে আমরা প্রকল্পের চেয়েও দৈনন্দিন জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দ্বারা বেশি পরিচালিত হয়েছি; কখনো কখনো অশুভ বিষয় দ্বারাও নয় কি? সেই জন্যই বিজ্ঞানে, ঘটনার প্রমাণ একটি নির্ভুল কঠিন পরীক্ষার ব্যাপার। আমরাও সঠিকভাবে একই কাজ করার জন্য প্রয়াস চালাতে পারি। চাঁদ হলো সবুজ পনিরের তৈরি, এবং এটাই একটি প্রকল্প; যদি ইচ্ছে হয় একজন মানুষ এ রকম বলতেই পারে। কিন্তু আরেক জন মানুষ যিনি নিবেদিতভাবে সমকালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং বিষয়ের প্রতি যার মনোযোগ আছে, যার একটি শক্তিশালী টেলিস্কোপও আছে এবং অন্যদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল যার জানা আছে, তিনি তার অভিমতে ঘোষণা করবেন যে এটা (চাঁদ) সম্ভবত যে সমস্ত বস্তু সামগ্রী দিয়ে আমাদের পৃথিবী তৈরি তার সাথে অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ বস্তু সামগ্রী দিয়ে তৈরি; এবং এটিও শুধুই একটি প্রকল্প মাত্র। কিন্তু আমার এ কথা বলার কোনো প্রয়োজনই পড়ে না যে দুইটি প্রকল্পের মধ্যে মানগত গভীর পার্থক্য আছে; যার একটি সম্পূর্ণ নির্ভুল বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ওপর প্রতিষ্ঠিত, নিশ্চিতভাবেই যার একটি যোগাযোগমূল্য আছে। যুক্তিহীন স্রেফ এলোপাতাড়ি যেসব অনুমান সাধারণত করা হয় তার মূল্য অতি সামান্যই। কারণসমূহ আবিষ্কারে আমাদের অগ্রসরতার প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ঠিক ঠিক তেমন নির্ভুলভাবে ফেলা হয়েছে যেমনটি আপনাদের কাছে অনুপুঙ্খভাবে আমি বর্ণনা করেছি। কোনো ব্যক্তি ঘটে যাওয়া কোনো নির্দিষ্ট বাস্তব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে জানতে চায়, প্রাকৃতিকভাবেই, কোনো প্রক্রিয়ায়, কোনো ধরনের ক্রিয়াপদ্ধতি, জ্ঞাতভাবে প্রকৃতিতে ঘটে, যা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ঘটনার কারণ উন্মোচন ও রহস্য ব্যাখ্যা করার জন্য প্রয়োগ করা হয়? সুতরাং এখান থেকে আপনি বৈজ্ঞানিক প্রকল্প পাবেন; এবং কীসের ভিত্তিতে কতটুকু সতর্ক ও সম্পূর্ণভাবে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে প্রকল্পটির মূল্য এই দুইয়ের সমানুপাতিক। এগুলোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ব্যবহারিক জীবনের অতি সাধারণ বিষয়সমূহ। বোকার অনুমান বোকামিই হবে, যেখানে জ্ঞানীর অনুমান ধারণ করবে বিচক্ষণতা। সকল ক্ষেত্রেই আপনি দেখলেন যে ফলাফলের মূল্য নির্ভর করে অনুসন্ধানকারীর ধৈর্য এবং বিশ্বস্ততার ওপর যা সে সম্ভাব্য সকল প্রকার নিরীক্ষার সময় (তার) প্রকল্পে প্রয়োগ করে।

OneHost BD
মাহবুব বোরহান

মাহবুব বোরহান

মাহবুব বোরহান ১৯৬৫ সালের ১৬ই নভেম্বর (২ অগ্রহায়ণ) ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার বাকপুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর এবং ২০০৭ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পাবনা ক্যাডেট কলেজ এবং পরে বিসিএস সাধারণ শিক্ষ্যা ক্যাডারে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ২০'র অধিক। তাঁর পিএইচডি গবেষণার গ্রন্থরূপ 'আব্দুল হক : জীবন ও সাহিত্য' প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি এবং তাঁর অনুবাদ গ্রন্থ 'আবুল ফজলের ধর্ম ও সমাজ ভাবনা' (মূল : আজরা আলাভি) প্রকাশ করেছে দাঁড়কাক প্রকাশনী। এ ছাড়া তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ আব্দুল হক শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক মাহবুব বোরহান প্রাবন্ধিক, কবি, ছড়াকার ও অনুবাদক। ইমেইল : mahbubborhan65@gmail.com

লেখকের অন্যান্য লেখা

কবিতা

মাহবুব বোরহানের কবিতাগুচ্ছ

জুলাই ২৯, ২০২০

বিজ্ঞাপন


সদ্য প্রকাশিত

রাত জাগার বৃত্তান্ত : যন্ত্রণা কিংবা মাদকতা
মুক্তগদ্য

রাত জাগার বৃত্তান্ত : যন্ত্রণা কিংবা মাদকতা

শামসুল কিবরিয়া
সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১
0

ঘুমে চোখ জড়াতে জড়াতে হঠাৎ ভেঙে যায়, কোনোদিন বা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে করতেও ঘুম আসে না। নিত্যদিনের সংঘাতময় নাগরিক...

কাফকার ‘রূপান্তর’ : সমকালের নিরিখে পাঠ

কাফকার ‘রূপান্তর’ : সমকালের নিরিখে পাঠ

জুলাই ৩১, ২০২১
অভ্র আরিফের কবিতাগুচ্ছ

অভ্র আরিফের কবিতাগুচ্ছ

জুলাই ২৪, ২০২১
‘তোমারে যা দিয়েছিনু তা তোমারি দান; গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।’

‘তোমারে যা দিয়েছিনু তা তোমারি দান; গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।’

জুলাই ১৫, ২০২১
বিচিত্র স্বাদের গল্প : ‘বাইরে যার হাসির ছটা ভিতরে তার চোখের জল’

বিচিত্র স্বাদের গল্প : ‘বাইরে যার হাসির ছটা ভিতরে তার চোখের জল’

জুলাই ১৪, ২০২১
আলো ছায়ার খেলা

আলো ছায়ার খেলা

জুলাই ১১, ২০২১
OneHost BD

এ মাসের সর্বাধিক পঠিত

ঢোঁড়াই চরিত মানস : প্রান্তিক মানুষের জীবনালেখ্য ও অধিকার-সচেতনার গল্প
বইকথা

ঢোঁড়াই চরিত মানস : প্রান্তিক মানুষের জীবনালেখ্য ও অধিকার-সচেতনার গল্প

সাফি উল্লাহ্
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
0

জীবন অন্বেষী ভারতীয় ঔপন্যাসিক সতীনাথ ভাদুড়ী (১৯০৬-১৯৬৫) রচিত অল্প-পঠিত অথচ বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলীতে অনন্য উপন্যাস ‘ঢোঁড়াই চরিত...

শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

জুলাই ১, ২০২০
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায় অভিশাপ’ : উপেক্ষিত প্রাচ্য পুরাণ এবং একটি বিতর্কিত বিনির্মাণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায় অভিশাপ’ : উপেক্ষিত প্রাচ্য পুরাণ এবং একটি বিতর্কিত বিনির্মাণ

জুলাই ৯, ২০২০
নিছক গল্প নয়, জীবনের আধার রূপকথা

নিছক গল্প নয়, জীবনের আধার রূপকথা

আগস্ট ২২, ২০২০

ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ : নিষিদ্ধ কামনার ভিন্ন উপস্থাপন

জুলাই ৬, ২০২০
OneHost BD
লেখা পাঠানোর ঠিকানা ও যোগাযোগ
pratiswik2020@gmail.com
অলংকরণ : মাকসুদুল হাকিম

প্রকাশিত লেখার বক্তব্য সম্পর্কিত দায় সংশ্লিষ্ট লেখকের

Design by OneHost BD ©2020 সর্বস্বত্ব সংরক্ষণকারী প্রাতিস্বিক

কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ

© 2020 সর্বসত্ব সংরক্ষকারী প্রাতিস্বিক.