Pratiswik
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
Pratiswik
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
বিজ্ঞাপন
ADVERTISEMENT
হোম অনূর্ধ্ব ২৭
যতীনের লোক-জ্যোতি

যতীনের লোক-জ্যোতি

প্রদিতি রাউত প্রমা প্রদিতি রাউত প্রমা
অক্টোবর ১৮, ২০২০
বিভাগ : অনূর্ধ্ব ২৭, প্রবন্ধ
214
Views
ফেসবুকটুইটারহুয়ার্ট্সঅ্যাপলিংকইন্ডই-মেইল

প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে বাংলাদেশের সংস্কৃতি চিন্তা ও চর্চার অন্যতম দিকপাল প্রাবন্ধিক যতীন সরকারকে (জন্ম. ১৮ আগস্ট, ১৯৩৬; গ্রাম : চন্দপাড়া, উপজেলা : কেন্দুয়া, জেলা : নেত্রকোণা) অনেকেই ‘গণশিক্ষক’ বলে অভিহিত করেন। শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে গত তিন প্রজন্মের এই শিক্ষক যে এলাকায় জন্ম নিয়েছেন তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহু পুরনো। লোকসংস্কৃতির ভাণ্ডার নামে পরিচিত কেন্দুয়া উপজেলার ‘লোক’ এবং ‘সংস্কৃতি’ দুই-ই তাঁর সংস্কৃতি চর্চা ও চিন্তাকে প্রভাবিত এবং ঋদ্ধ করেছিলো নিঃসন্দেহে। কেন্দুয়ার লোক আবহেই তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। ফোকলোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কনটেক্সচুয়াল এপ্রোচ বা প্রতিবেশ প্রসঙ্গ বিচার। অধ্যাপক যতীন সরকার যেখানে জন্ম নিয়েছেন, বেড়ে উঠেছেন প্রতিবেশগত ভাবেই সেখানে তিনি লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন টেক্সট ধারণ করেছে। পরবর্তীকালে তাঁর এ বিষয়ক বিশ্লেষণ এজন্য আরো জীবন্ত হয়েছে। সে অঞ্চল ও তার আশেপাশে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য লোকগান, গীতিকা, পালা, কবিগান ইত্যাদি। শুধু তাই নয় এখানে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য লোকসাধক, সংগ্রাহক। যেমন : উকিল মুন্সী, জালালউদ্দীন খাঁ, চন্দ্রকুমার দে। মরমী সাধক জালাল উদ্দীন খাঁ-এর ৬৩০টি গান ‘জালাল-গীতিকা’ নামক গ্রন্থে চার খণ্ডে প্রকাশ হয়েছে। শৈশবেই এই জালাল খাঁ-এর সান্নিধ্যে এসেছিলেন যতীন সরকার। তাঁর স্পর্শে এসেই প্রথম লোকসংস্কৃতির প্রতি অগাধ আগ্রহ জন্ম নেয় কিশোর যতীন সরকারের মনে। যার প্রভাব পরবর্তী সময়ে তাঁর লোকসংস্কৃতি বিষয়ক কাজকে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রাকৃতজন তথা গণমানুষের সংস্কৃতি নিয়ে সবসময় ক্রিয়াশীল ছিলেন তিনি। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে প্রাচীন ভারতীয় ন্যায়সূত্র তিনি কৈশোরেই ধারণ করেছিলেন। যৌবনে মার্কসীয় অনুশীলন তাঁকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের অনুসারী করে তোলে। তিনি গণমানুষের সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।

অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ‘জলদ’ যতীন সরকার সংখ্যায় তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, ‘যতীন সরকার আমাদের দেশের একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ। তিনি মার্ক্সবাদে দীক্ষিত। বাংলার লোকসংস্কৃতিকে তিনি অবলোকন করেছেন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। এর মধ্যে তিনি খুঁজে পেয়েছেন সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, বিরহ-মিলন পরিপূর্ণ জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি’

লোকসংস্কৃতির প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসার আরো একটি বড়ো কারণ নিম্নবর্গের প্রতি টান। গ্রামীণ মনোলোক, নিম্নবর্গের ইতিহাস এদেশে খুব কম চর্চা হয়েছে। অবশ্য যতীন সরকার নিজেকে ‘গেঁয়ো’ বলেছেন বিভিন্ন সময়ে। গ্রামীণ নিম্নবর্গকে নিয়ে কাজ যেখানে খুবই কম হয়েছে সেখানে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’ ব্যতিক্রম এক দৃষ্টান্ত। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাকৃতজনের ভাবনা, অবস্থান, দর্শন দিয়েই দ্বিজাতি তত্ত্বের অসারতা প্রমাণ করেছেন। অন্য একটি বই ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’। এই বইয়ের মূল চিন্তার শিকড় আছে ‘প্রকৃতির প্রকৃত তাৎপর্য ও আমাদের সংস্কৃতি’ নামক প্রবন্ধে। আমাদের চিন্তার ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অন্বেষণে লেখক উপমহাদেশের চিন্তার দিক-দিগন্তে বিচরণ করেছেন। লেখক বলেন, ‘প্রকৃতিই সংস্কৃতির জননী। প্রকৃতিসংলগ্ন চিন্তাই প্রাকৃতজনের দর্শন। মানুষে-মানুষে জাতি-বর্ণ-বিভেদের চিন্তা প্রকৃতিসংগত নয়।’ বরং ব্রাহ্মণ বা উচ্চমার্গীয়রা নিজেদের স্বার্থে শ্রেণিভেদ, জাতিভেদ জিইয়ে রাখতে চেয়েছে। তারা নিজস্ব যুক্তি দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ রেখে বর্ণবাদ জিইয়ে রাখতে চান। আন্তনীয় গ্রামসি যে ধারার বুদ্ধিজীবীদের ‘অর্গানিক’ বুদ্ধিজীবী বলেন যতীন সরকার মূলত তাই। অর্থাৎ প্রাকৃতজনের বুদ্ধিজীবী৷ পোস্ট মর্ডান সময়ের পণ্য সংস্কৃতির নিরিখে তিনি প্রাকৃতজনের সংস্কৃতিকে বাতিল করেননি; বরং বলেছেন এই নিম্নবর্গ সংস্কৃতির চর্চা ছাড়া একটি জাতি পূর্ণাঙ্গতা পাবে না। সাধারণ মানুষের দর্শন, বিশ্বাস, জীবনাচার একটি জাতীয় সংস্কৃতিকে ঋদ্ধ করতে পারে। তিনি বলেন প্রকৃত বাঙালির জীবন দর্শন, শেকড় পাওয়া যায় ‘দোহাকোষ’ ও ‘চর্যাপদে’। তিনি শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষদের সাথে বস্তুবাদের সরাসরি সম্পর্ক দেখেছেন। তাঁর মতে আগেকার ব্রাহ্মণরা বা সমাজের উঁচু জাতেরা পরশ্রমজীবী আর কৃষক, শ্রমিকেরা শ্রমজীবী। কৃষিই দীর্ঘদিন ধরে এই ভূমির মানুষের জীবিকা। তাই বাংলার মূল প্রাকৃতজন কৃষক। পরশ্রমজীবীদের দর্শন হয় ভাববাদী, আর শ্রমজীবীদের দর্শন হয় বস্তুবাদী। কারণ শ্রমজীবীদের সার্বক্ষণিক জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই পার্থিব জীবন সংগ্রাম তাদের বস্তুবাদে বিশ্বাসী করে তোলে। প্রাকৃতজনেরও যে দর্শন আছে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস ঘাটলে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন বা মধ্যযুগের ধর্ম ও জীবনচর্চার যে দর্শন পাওয়া যায় তা প্রাকৃতজনেরই দর্শন। আর এ দর্শন অনেকাংশেই বস্তুবাদী। এ বিষয়ে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ‘ভারতে বস্তবাদ প্রসঙ্গে’ বইয়ে একইভাবে বলা হয়েছে যে, আমাদের দেশে বস্তুবাদী দর্শন বুঝাবার জন্য দুটি আলাদা আলাদা পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজন হয়নি। দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে একই শব্দ। লোকায়ত। লোকায়ত মানে বস্তুবাদী, অর্থাৎ জনগণের দর্শন।

তবে যতীন সরকার বিভিন্নভাবে দেখিয়েছেন, বাংলার প্রাকৃতজন এই দর্শনের পরোক্ষ উত্তরাধিকার গ্রহণ করেছে। সম্পূর্ণভাবে একই দর্শন পরবর্তী সময়ে বয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। শাসকগোষ্ঠী তাদের কোণঠাসা করে দিয়েছে। তাই আদি নিম্নবর্গের দর্শন আর বর্তমান নিম্নবর্গের দর্শন এক নয়। তবুও অভিজাত শাসক-শোষক শ্রেণির দৃষ্টির আড়ালে নিজস্ব দর্শন বাঁচিয়ে রাখার কিছুটা চেষ্টা তারা করেছে। মুক্তবুদ্ধির চর্চার ক্ষেত্রে তিনি লোকসমাজকে সবসময় এগিয়ে রেখেছেন। তিনি ভেবেছেন, প্রাকৃতজনের জীবন দর্শন নিজেই মুক্ত, স্বাধীন। প্রতিকূলতা আসেনি তেমন নয়। তবুও আরোপিত জ্ঞান তারা খুব কমই চর্চা করেছে। ‘মুক্তবুদ্ধিচর্চা ও বাঙালির লৌকিক ঐতিহ্য’ প্রবন্ধে তিনি বলতে চেয়েছেন, বাঙালির লৌকিক ঐতিহ্যের দিকে সন্ধানী দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে যে পাশ্চাত্য তথা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু সংখ্যক মানুষের মধ্যেই যে মুক্তবুদ্ধি চর্চা সীমিত হয়ে থেকেছে– এমন কথা মোটেই সত্য নয়  বরং প্রকৃত সত্য হচ্ছে আধুনিক সময়ের আগে থেকেই বাংলার লোকসাধারণ মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে এসেছে এবং নানা ধরনের প্রতিকূলতার চাপে কখনো কখনো সে চর্চার ধারা কিছুটা ক্ষীণ হয়েছে, কখনো-বা চরম বাধার সম্মুখীন হয়েছে; কিন্তু কখনোই সে স্রোত একবারে  রুদ্ধ বা স্তব্ধ হয়ে যায়নি।

প্রাকৃতজন সমাজকে সুন্দর করে বহু বাস্তবপন্থা শেখায়। বস্তুবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমরা পাশ্চাত্য দর্শন থেকে এইসময়ে পেয়েছি এই ধরনের ভাবনাকে তিনি একেবারেই মেনে নেননি।  তার কারণও লোকসংস্কৃতি চর্চা। শ্রীচৈতন্য, চার্বাক এঁদের জীবনী আলোকপাত করে তিনি স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন প্রাচ্যের সংস্কৃতিতে যেমন ভাববাদ ছিলো, তেমনি জোরালোভাবে বস্তুবাদও ছিলো। আর পূর্ব ময়মনসিংহের উকিল মুন্সীসহ অনেক লোকসাধকের জীবনী এবং ময়মনসিংহ গীতিকার পালাসমূহের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি দেখিয়েছেন অসম্প্রাদায়িক চিন্তাচেতনা এ ভূখণ্ডের ঐতিহ্য। এ চিন্তাচেতনা আমরা পাশ্চাত্য থেকে গ্রহণ করিনি, বরং আমাদের ইতিহাস আরো অনেক বেশি সমৃদ্ধ।   

তিনি ঐতিহ্য ও আধুনিকতা দুইয়ের মেলবন্ধনে বিশ্বাসী। এমনকি পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকেও তিনি অবজ্ঞা করেন না। কিন্তু বিশ্বাস করেন, শুধু পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চর্চায় এদেশের সাংস্কৃতিক মূলধারা নির্মাণ অসম্ভব। কবিগান, পালা, লোকসাধকদের জীবনী নানাকিছু থেকে গবেষণা করে তিনি দেখিয়েছেন মূলধারার সংস্কৃতি নির্মাণে লোকসংস্কৃতিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। কারণ যে সংস্কৃতিকে একটি দেশের লোকসংস্কৃতি বলে চিহ্নিত করা হয় তাই তো সেই দেশের মূল সংস্কৃতি। সাধারণের সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে কোনো দেশের সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে না। যে কোনো সংস্কৃতির উৎসমূল সাধারণ মানুষ। যাদের আমরা ‘লোক’ বলি। সাধারণ মানুষের জীবনাচার, বোধ, বিশ্বাস, দর্শনই সংস্কৃতিকে ধারণ করে। তাই তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধু অন্য সংস্কৃতি চর্চা মূল্যহীন। সংস্কৃতি চর্চায় লোকসংস্কৃতির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি তা অনুধাবনের জন্য একাডেমিক ফোকলোর চর্চাকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, ‘লোকসংস্কৃতি নিয়ে বাংলাদেশে যে ধরনের একাডেমিক চর্চা হয়েছে তাতে অনেক ফাঁক ও ফাঁকি রয়ে গেছে। লোকসংস্কৃতিই যে বাঙালির মূল সংস্কৃতি, এ বিষয়টি আমাদের ভাবনা ও মননে যথাযথভাবে উপস্থিত নেই। এটি আমাদের সাংস্কৃতিক বিভাজনের অন্যতম কারণ হতে পারে।’

লৌকিক ধর্ম ও দর্শন নিয়ে যতীন সরকারের আগ্রহের অন্ত ছিলো না। এ বিষয়ে তাঁর অনেক কাজ। তিনি বস্তুবাদের নিরিখে লৌকিক ধর্মকে দেখেছেন। সারা উপমহাদেশেই লৌকিক ধর্মের অস্তিত্ব থাকলেও বাংলায় তা অনেক বেশি সংহত ছিলো। কারণ এ অঞ্চলে প্রান্তিকজনের বাস ছিলো। তাঁর মতে, বিপুল সংখ্যক বাঙালি প্রাকৃতজন হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মের খোলসটাকে গ্রহণ করলেও আসলে তারা তন্ত্রাশ্রিত লৌকিক ধর্মকেই বেশি মানে। এমনকি পির-দরবেশের হাত ধরে প্রচারিত ইসলামও এ অঞ্চলে লৌকিক ইসলামের রূপ ধারণ করে। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, এদেশে প্রাকৃতজনেরা বৌদ্ধ, হিন্দু বা ইসলাম যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন তারা শাস্ত্রীয় সে ধর্ম পালন করতে পারেনি। লৌকিক ছাঁচে আটকে গেছে। এদের কথাবার্তা শুনে মনে হবে এরা শাস্ত্রীয় ধর্মের অনুসারী হয়ে চূড়ান্ত রকমের ভাববাদী। কিন্তু এদের সার্বিক বিশ্বাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এরা লৌকিক বস্তুবাদের ওপর বেশি আস্থাশীল। অর্থাৎ কিছুটা স্ববিরোধী। একই সঙ্গে দুই বিশ্বাসেই আস্থাশীল। এদেশের প্রাকৃতজন সময়ের সাথে লৌকিক ধর্ম পালন কমালেও, তাদের জীবন লৌকিক ধর্মের প্রভাবমুক্ত নয়। তাদের ধর্মীয় ভাবাদর্শ সময়ের সাথে রূপান্তরিত হয়েছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লোকসমাজের চৈতন্যে প্রাচীন ভারতীয় লোকায়ত বস্তুবাদের ঐতিহ্য যেমন ক্রিয়াশীল থেকেছে, তেমনই বস্তুবাদের দুর্বলতার ফাঁক দিয়ে ভাববাদী ভাবালুতারও অনুপ্রবেশ ঘটে গেছে। এ অনুপ্রবেশের ফলে লোকমানসে যে বোধের উন্মেষ ঘটেছে, সে বোধে লৌকিক ভাবাদর্শেও রূপান্তরের ছোঁয়া লেগেছে। সেই রূপান্তরিত ভাবাদর্শ থেকেই উদ্ভূত হয়েছে লৌকিক ধর্ম।’ (যতীন সরকার, ২০১৬ : ৪১)

এভাবেই হয়তো তারা শাস্ত্রীয় দেবতাকেও নিজের মতো লৌকিক রূপ দান করেছে। তিনি তার এ বিষয়ক গবেষণায় দেখিয়েছেন একুশ শতকে এসে লৌকিক দর্শন চর্চায় গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন আরো বেশি। কারণ সাম্রাজ্যবাদ এ সময়ে মানুষের মূল্যবোধকে কেড়ে নিচ্ছে। মৌলবাদ মানুষের অসাম্প্রদায়িক ভাবনা, স্বাধীন মননশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

লোকসমাজে পুরুষতন্ত্র ও নারীচেতনা নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। লোকসমাজে প্রচলিত লোকগল্পে কিংবা প্রবাদ-প্রবচনে পুরুষের প্রতি যে পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয়েছে তা তিনি অনেক লোকগল্প দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। মায়ের পুত্রের প্রতি অধিক প্রেমের যে ফ্রয়েডীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তার সাথে তাঁর দ্বিমত রয়েছে৷ লোকসমাজের বিভিন্ন উদাহরণ টেনে তিনি দেখাতে চেয়েছেন স্নেহের এই তারতম্য কোনোভাবেই জৈবিক নয় বরং অনেক বেশি সামাজিক নির্মাণ। শ্রেণিসমাজ পত্তনের পর থেকেই নারীর মর্যাদার অবনতি হয়েছে। নারীর হাতে তৈরি বহু লোক উপাদানে নারীকেই বন্দি রাখা হয়েছে। নারীর চলা-ফেরা, আচার-আচরণকে শৃঙ্খলাবন্দি করার জন্য পুরুষতন্ত্র বহু লোকবিশ্বাস ও সংস্কারের জন্ম দিয়েছে। গান, প্রবাদও তার ব্যতিক্রম নয়। যতীন সরকার বলেন, ‘নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জ তথা এককালের পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচলিত ‘গাইনের গীত’- এত গীতালুরা নারী জাতির কতকগুলো কাল্পনিক বিভাজনের পরিচয় তুলে ধরত। যেমন- শঙ্খনিয়া, পদ্মনিয়া, চিন্তনিয়া ইত্যাদি। এদের অধিকাংশের প্রতিই নানারকম কুৎসা আরোপণ করা হত।’ (যতীন সরকার, ২০১৬ : ৬৪)

এরকম একটি গান :

শঙ্খনিয়া নারী জানো সংখ্যা দিকে মন
দিবানিশি করে কেবল পিন্ধনের যতন।
পদ্মনিয়া নারী জানো পদ্মফুলের বাস
আপন পতি ঘরে থুইয়া পরের করে আশ
হস্তিনীয়া নারী জানো পায়ের গোছা মোটা
সেই নারী বংশের মধ্যে থইয়া যায় খুটা।

শুধুমাত্র ‘চিন্তনীয়া’ নারীদের প্রশংসা করা হয়েছে :

চিন্তনীয়া নারী জানো চিন্তার দিকে মন
দিবানিশি করে কেবল সুস্বামীর ভজন

লোকসমাজের পুরুষতন্ত্র তার বহু উপাদানে এভাবেই নারীর একমাত্র কাজ সুস্বামীর ভজন করা তা দেখাতে চেয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকে বারংবার। এমন কিছু অনুশাসন গেড়ে দিয়েছে যাকে নারী তাদের ধর্ম বলে মেনে নিয়েছে। ননদ, শাশুড়ি চরিত্রকে সবসময় খলনায়ক রূপে দেখানো প্রসঙ্গে যতীন সরকার বলেছেন, নারীই যে নারীর শত্রু লোকসমাজের পুরুষতন্ত্র তা দেখাতে চেয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে আমার মত, ননদ বা শাশুড়িকে পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধি হিসাবেই দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ননদ যতটা না একজন নারী, তারচেয়েও বেশি স্বামীর বোন। তবে যতীন সরকারের মতে, লোকসমাজের ওপর দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের আলোর প্রক্ষেপণ ঘটালে দেখা যাবে পুরুষতন্ত্র নারীর সব ভাবনা ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও সবসময় তাতে সফল হয়নি। ফোকলোর পর্যালোচনাতেই লোকসমাজে নারীর বন্ধনমুক্তির নানা সোজা-বাঁকা প্রয়াসের পরিচয় ধরা পড়ে। তবে সে পরিচয়কে স্পষ্ট করতে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দৃষ্টি ও পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।

প্রাবন্ধিক যতীন সরকার তাঁর ঐতিহ্য নিষ্ঠা, মুক্তবুদ্ধি ও বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ফোকলোরকে বিশ্লেষণ করেছেন। লোকসংস্কৃতিই যে বাঙালি সংস্কৃতির মূল ধারা তা তিনি বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছেন। আর মূলধারার পথ ধরেই জাতীয় সংস্কৃতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। যতীন তাঁর লোক-জ্যোতিতে তাই দেখেছেন, দেখিয়েছেন।

তথ্যসূত্র

১. যতীন সরকার (২০১৬), বাংলার লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ, চর্চা গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা।   
২. যতীন সরকার (২০০৫), পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা। 
৩. যতীন সরকারের স্টাইল ও আদর্শ, সরোজ মুস্তফা।

বিজ্ঞাপন
প্রদিতি রাউত প্রমা

প্রদিতি রাউত প্রমা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগে অধ্যয়নরত।

লেখকের অন্যান্য লেখা

বিজ্ঞাপন


সদ্য প্রকাশিত

নেয়পায়াসাম
অনুবাদ

নেয়পায়াসাম

আদনান সহিদ
অক্টোবর ২২, ২০২০
0

[মালায়লাম ভাষার শীর্ষ কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে কমলা দাস (১৯৩৪-২০০৯) অন্যতম। তাঁর জন্ম কেরালার দক্ষিণ মালাবারের পুণ্যাউরকুলামের এক রক্ষণশীল পরিবারে। বাবার চাকুরিসূত্রে শৈশবের...

যতীনের লোক-জ্যোতি

যতীনের লোক-জ্যোতি

অক্টোবর ১৮, ২০২০
‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’ : একটি উত্তর উপনিবেশীয় বিশ্লেষণ

‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’ : একটি উত্তর উপনিবেশীয় বিশ্লেষণ

অক্টোবর ১০, ২০২০
ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা

ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
বিষজন্ম বিষমৃত্যু

বিষজন্ম বিষমৃত্যু

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
কেঁদেও পাবে না তাকে

কেঁদেও পাবে না তাকে

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

এ মাসের সর্বাধিক পঠিত

ঢোঁড়াই চরিত মানস : প্রান্তিক মানুষের জীবনালেখ্য ও অধিকার-সচেতনার গল্প
বইকথা

ঢোঁড়াই চরিত মানস : প্রান্তিক মানুষের জীবনালেখ্য ও অধিকার-সচেতনার গল্প

সাফি উল্লাহ্
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
0

জীবন অন্বেষী ভারতীয় ঔপন্যাসিক সতীনাথ ভাদুড়ী (১৯০৬-১৯৬৫) রচিত অল্প-পঠিত অথচ বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলীতে অনন্য উপন্যাস ‘ঢোঁড়াই চরিত...

শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

জুলাই ১, ২০২০
জালাল উদ্দিন রুমির কবিতা

জালাল উদ্দিন রুমির কবিতা

জুলাই ২৯, ২০২০
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায় অভিশাপ’ : উপেক্ষিত প্রাচ্য পুরাণ এবং একটি বিতর্কিত বিনির্মাণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায় অভিশাপ’ : উপেক্ষিত প্রাচ্য পুরাণ এবং একটি বিতর্কিত বিনির্মাণ

জুলাই ৯, ২০২০
রক্তের কিংবা বীর্যের স্রোত

রক্তের কিংবা বীর্যের স্রোত

আগস্ট ২১, ২০২০
বিজ্ঞাপন
লেখা পাঠানোর ঠিকানা ও যোগাযোগ
pratiswik2020@gmail.com
অলংকরণ : মাকসুদুল হাকিম

প্রকাশিত লেখার বক্তব্য সম্পর্কিত দায় সংশ্লিষ্ট লেখকের

Design by OneHost BD ©2020 সর্বস্বত্ব সংরক্ষণকারী প্রাতিস্বিক

কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ

© 2020 সর্বসত্ব সংরক্ষকারী প্রাতিস্বিক.