Pratiswik
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
Pratiswik
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
বিজ্ঞাপন
ADVERTISEMENT
হোম প্রবন্ধ
শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

মামুনুর রশিদ মামুনুর রশিদ
জুলাই ১, ২০২০
বিভাগ : প্রবন্ধ, বিশেষ সংখ্যা
3.1k
Views
ফেসবুকটুইটারহুয়ার্ট্সঅ্যাপলিংকইন্ডই-মেইল

বোদলেয়ারের মৃত্যুর চার বছর পর আর্তুর র‍্যাঁবো লিখেছিলেন, ‘প্রথম দ্রষ্টা তিনি, কবিদের রাজা, এক সত্য দেবতা।’ বুদ্ধদেব বসু বোদলেয়ারের কবিতার অনুবাদ করতে বসে ভূমিকায় এই উক্তি দিয়েই শুরু করেছিলেন। বুদ্ধদেব বসুর জ্যেষ্ঠ বন্ধু, আবু সয়ীদ আইয়ুব তাঁর বিখ্যাত সমালোচনা গ্রন্থ, ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ লিখতে বসে বোদলেয়ারকে নিয়েই সময় ব্যয় করেছিলেন বেশি। পল ভালেরি বলেছিলেন, ‘বোদলেয়ার ফরাসি সাহিত্যের উপর সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি, তাঁর কবিতা আধুনিকতার প্রতিভূ।’

বোদলেয়ারকে বলা যেতে পারে, প্রথম কাউন্টার রোমান্টিক এবং কবিতায় আধুনিকতার প্রথম প্রকৃত পিতা। বাংলার মহৎ রোমান্টিক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ; সম্ভবত রবীন্দ্রনাথই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রোমান্টিকদের একজন। বাংলা সাহিত্যে পাঁচজন পাণ্ডব কবি আটঘাট বেঁধে নেমেছিলেন, রোমান্টিকতা ও রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে। রবীন্দ্রনাথ ও রোমান্টিক কবিতাকে বাতিল করে দেয়াই ছিল তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। যদিও তাঁরা প্রত্যেকেই রবীন্দ্রনাথের ব্যাপক ও তীব্র ছায়ার নিচে থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন।

রোমান্টিক কবিতার সিদ্ধ রসকে টুকরো টুকরো করে ভেঙেছিলেন জীবনানন্দ দাশ ও তাঁর চার সহযোগী। এর মধ্যে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরোপুরি রোমান্টিকতাকে অস্বীকার করতে পারেননি। অমিয় চক্রবর্তী এবং বিষ্ণু দে রবীন্দ্রবলয় থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে অনেকটা সময় নিয়েছিলেন। তাঁরা সবাই চমৎকার ‘আধুনিক’ তকমাটিও অর্জন করেছিলেন এই আক্রমণাত্মক কৌশলের মধ্য দিয়েই।

কিন্তু শার্ল বোদলেয়ার, বাংলার পঞ্চ পাণ্ডবদের মতো ছিলেন না। বোদলেয়ার ছিলেন এদের উল্টো। বোদলেয়ার যখন কবিতা লেখা শুরু করলেন তখন ফ্রান্সে রোমান্টিসিজমের তীব্র প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। রোমান্টিকদের রাজা ভিক্টর হুগো তখন প্রতিষ্ঠার চরম উৎকর্ষে অবস্থান করছেন। বোদলেয়ার রোমান্টিকতার বিরোধিতা করেননি ; বরং রোমান্টিকতার একটি অভিনব সংজ্ঞা দিলেন তিনি,” রোমান্টিকতা এক প্রকার অনুভূতি, বিশেষত অন্তরঙ্গতা, আধ্যাত্মিকতা, বর্ণবৈভব ও অসীমের আকাঙক্ষা।”

১৮৫৭ সালে একশোটি কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হলো বোদলেয়ারের অমর কাব্য ‘Les Fleurs du Mal’ (ক্লেদজ কুসুম)। লণ্ডনে রাইমার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠার সময় ইয়েটস অনুভব করেছিলেন যে, যা কিছু কবিতা নয়, তা থেকে মুক্তি দিতে হবে কবিতাকে এবং লিখে যেতে হবে বোদলেয়ার ও ভের্লেনের মতো করে। যা কিছু কবিতা নয়, তা থেকে কবিতার মুক্তির প্রথম দলিল, ‘ফ্ল্যর দ্যু মাল।’ ইয়েটস, ভের্লেন, মালার্মে, ভালেরি, রিলকে, র‍্যাঁবো, এলিয়ট, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু, সমর সেন, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, রফিক আজাদ, আবুল হাসান, হুমায়ুন আজাদ এতো বড় কবি হতেন না, যদি না তাঁরা বোদলেয়ারের পরে জন্মাতেন।

‘ফ্ল্যর দ্যু মালের’ ভূমিকায় বোদলেয়ার ঘোষণা করলেন, ‘লব্ধ প্রতিষ্ঠ কবিরা কাব্য রাজ্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশগুলি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন বহুকাল পূর্বেই; সুতরাং আমাকে হতে হবে অন্যকিছু।’ যেহেতু তাঁর আগের রোমান্টিক কবিরা ছিলেন প্রেম ও মাধুর্যের কবি, তাই বোদলেয়ার হতে চাইলেন তিক্ততা ও ঘৃণার কবি। মঙ্গলবোধের পরিবর্তে তিনি অমঙ্গলবোধকেই মূর্ত করে তুললেন তাঁর কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষ দিকে, যে অমঙ্গবোধের চর্চা করে আধুনিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন, তা তিনি লাভ করেছিলেন বোদলেয়ার পাঠ করেই।

বোদলেয়ারের কবিতার বিষয়বস্তু হল, বিতৃষ্ণা, বিষাদ, বুদ্ধদেব বসুর ভাষায় নির্বেদ, কামনা-বাসনা, ইন্দ্রিয়বিলাস, পতিতের জীবন, মদ ও মৃত্যু। বোদলেয়ার হুইটম্যানের মত কবিতার প্রকরণে অপূর্বতা আনেননি, গোতিয়ে বা মালার্মের মত গুরু সাজেননি, এজরা পাউণ্ড বা এলিয়টের মত কোন আন্দোলনের নায়ক নন তিনি, গ্যেটের মত স্বর্গের দার্শনিক হতে চাওয়ার পরিবর্তে স্বেচ্ছায় তিনি নরক যন্ত্রণাকে ভোগ করতে চেয়েছিলেন। ‘ক্লেদজ কুসুম’ এ তিনি পদ্মফুলের চেয়ে কাদাকেই অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

জীবন ও মৃত্যুকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের মত রহস্য করেননি বোদলেয়ার। মৃত্যুর মত জীবন নামের নিরর্থকতাকেও তিনি সহজেই মেনে নিয়েছিলেন। টমাস মানের, ‘ভেনিসে মৃত্যু’ গল্পে আশেনবাখ হঠাৎ করেই ভ্রমণ লালসায় অস্থির হয়ে উঠেছিল; সে জানল না তার সত্য বাসনা মৃত্যুর জন্যে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত, ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতার নায়ক আত্মঘাতী সেই যুবকও অনুভব করে গিয়েছিল, আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে/আমাদের ক্লান্ত করে। রবীন্দ্রনাথও যৌবনে একবার লিখেছিলেন, ‘ওরে মৃত্যু, জানি তুই আমার বক্ষের মাঝে বেঁধেছিস বাসা।’

গ্যেটের তরুণ নায়ক হেবর্টর সবকিছু থাকতেও জীবনকে অর্থহীন ভেবেই আত্মহত্যা করেছিল। হয়ত, জীবনানন্দ দাশেরও ট্রামের তলায় চাপা পড়ার পেছনে বোদলেয়ারের বিতৃষ্ণা, বিষাদ আর নির্বেদই নীরবে কাজ করে চলেছিল। সুধীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘মৃত্যু, কেবল মৃত্যুই ধ্রুবসখা।’ এই বোধ সুধীন্দ্রনাথ বোদলেয়ারের থেকেই পেয়েছিলেন। বোদলেয়ার লিখেছিলেন, ‘হে মৃত্যু, সময় হলো!/এই দেশ নির্বেদে বিধুর/এসো বাঁধি কোমর, নোঙর তুলি/ হে মৃত্যু প্রাচীন! ( ভ্রমণ) [অনুবাদ : বুদ্ধদেব বসু]

মৃত্যু, যন্ত্রণা, ক্লেদ, দুঃখ, বিষাদ, বিতৃষ্ণা, বিবমিষা, পাপ ও পঙ্ক এসবই বোদলেয়ারের বিপুল আগ্রহের বিষয় ছিল। বোদলেয়ার লিখলেন, ‘আমি যেন রাজা, যার সারা দেশ বৃষ্টিতে মলিন/ধনবান, নষ্টশক্তি, যুবা, তবু অতীব প্রবীণ/শিক্ষকের নমস্কার প্রত্যহ যে দূরে ঠেলে রেখে/শিকারি কুকুর নিয়ে ক্লান্ত করে নিজেই নিজেকে। (বিতৃষ্ণা) [অনুবাদ : বুদ্ধদেব বসু]

বোদলেয়ারের ‘ফ্ল্যর দ্যু মাল’ পড়েই আমি রবীন্দ্রনাথের ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’র অর্থ বুঝেছি। সম্ভবত বোদলেয়ারের ‘ভ্রমণ’ কবিতার রোমান্টিক সংস্করণের নাম রবীন্দ্রনাথের ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’। র‍্যাঁবোর ‘মাতাল তরণী’ও বোদলেয়ারের, ‘ভ্রমণ’ কবিতার অনুকরণে লেখা। জীবনানন্দ দাশের, ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতাটিও বোদলেয়ারের, ‘এক শব’ কবিতার কাছে ঋণী।

আত্মহত্যা বিষয়ক কবিতাগুলোর অনুপ্রেরণা জীবনানন্দ দাশ বোদলেয়ারীয় বিতৃষ্ণা আর বিষাদ থেকেই লাভ করেছিলেন। বোদলেয়ার আর জীবনানন্দের মৃত্যুভাবনা অনেকটা একই রকমের। জীবনানন্দের বিতৃষ্ণাও পরিণত হয়েছে বোদলেয়ারের বিতৃষ্ণার মতো, শুধু জগতের প্রতি নয়, নিজের প্রতিও। আত্মবিনাশের পথে দু’জনই এগিয়ে গেছেন। একই পরিণতির দিকে তারা ধাবিত হয়েছিলেন। দু’জনই নির্মোহ কবি, মহৎ কবি। রবীন্দ্রনাথের মতো বোদলেয়ার আর জীবনানন্দ কেউই মোহের কাছে আত্মসমপর্ণ করেননি। আর এখানেই আমি বোদলেয়ারকে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবছি, ‘What man has made of man’ তা নিয়ে বোদলেয়ার ভাবিত নন, বোদলেয়ারের ভাবনা হলো, আমি নিজেকে নিয়ে কী ভাবছি?

বিতৃষ্ণা আর বিষাদই বোদলেয়ারকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিয়েছিল। তিনি কবিতায় লিখলেন, বেলা যায়! কবর অপেক্ষমাণ; ক্ষুধিত মরণ/তোমার জানুতে মাথা, অপসৃত ললাটের বলি/মনে আনি তপ্ত, শাদা নিদাঘের বিষণ্ণ স্মরণ/এবং হলুদ, নম্র হেমন্তের আলোর অঞ্জলি। (হেমন্তের গান) [অনুবাদ : বুদ্ধদেব বসু]

১৮৪৫ সালের জুন মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বোদলেয়ার। জান দ্যুভালের সাথে কাফেতে বসে হঠাৎ করেই নিজের বুকে ছুরি বসিয়ে দেন বোদলেয়ার। আঁসেলকে লেখা একটি বিদায়পত্রে বোদলেয়ার লিখলেন, ‘আমি আর বেঁচে থাকতে পারছি না বলেই আত্মহত্যা করছি, ঘুমোতে যাবার আর জেগে ওঠার পরিশ্রম অসহ্য হ’য়ে উঠেছে আমার পক্ষে।’ পরে মায়ের কথা ভেবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন।

রবীন্দ্রনাথের সাথে বোদলেয়ারের প্রেমের পার্থক্য প্রচণ্ড ভাবে ধরা পড়ে কবিতায়। সৌন্দর্য চেতনায়ও দুজনের ফারাক ব্যাপক। তরুণ রবীন্দ্রনাথ যেখানে বলেন, ‘পরো শুধু সৌন্দর্যের নগ্ন আবরণ।’ সেখানে বোদলেয়ারের নায়ক প্রেমিকাকে প্রথমবার নগ্ন দেখে তীব্র প্রতিবাদ করে। যেখানে রোমান্টিকেরা নায়িকাকে বিনা কষ্টে লাভ করতে উদ্যত হয় সেখানে আধুনিকতার পিতা বোদলেয়ার সাধনা ও চেষ্টা দ্বারা প্রেমিকাকে লাভ করতে চান। কীটস ও এলান পো’র প্রভাব থাকলেও, সম্ভবত বোদলেয়ারের প্রভাবেই জীবনানন্দ হাজার বছরের চেষ্টার পর বনলতা সেনের দেখা পেয়েছিলেন জীবনে। বুদ্ধদেব বসু তাঁর কবিতায়, দু-হাত ভরে গ্রহণ করেছিলেন বোদলেয়ারের ঋণ।

বোদলেয়ারের ‘অলংকার’ কবিতার সাথে রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রা’ কাব্যের, ‘বিজয়িনী’ কবিতার একটি অসামান্য সম্পর্ক রয়েছে। দুটি কবিতাতেই নগ্নতা ও দেহজ বিষয় রয়েছে। বোদলেয়ার কবিতার শুরুতেই বলেছেন, ফেলে দিলো বসন আমার প্রিয়া। আমার অদ্ভুত/খেয়ালের অর্থ বুঝে- সুলতানের সোহাগে গর্বিণী/সুন্দরী বাঁদির মত চন্দ্রহার, কেয়ূর, কিঙ্কিণী (কিন্তু অন্য কিছু নয়) পরে নিয়ে হলো সে প্রস্তুত/….আমার তন্ময় চোখ, মগ্ন হয়ে মধুরের ধ্যানে/দ্যাখে তার দ্যুতিময় কটিতট, জঠর, জঘন/মরালপঙক্তির মত কম্পমান, কেলিপরায়ণ/উদর, স্তনযুগল, দ্রাক্ষাপুঞ্জ আমার উদ্যানে। [অনুবাদ: বুদ্ধদেব বসু]

বোদলেয়ারের থেকেও এগিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, তীরে শ্বেতশিলাতলে সুনীল বসন/লুটাইছে এক প্রান্তে স্খলিতগৌরব অনাদৃত/…কলনৃত্যে বাজাইয়া মাণিক্যকিঙ্কিণী/কল্লোলে মিশিতেছিল/…ললাটে, অধরে, ঊরু পরে, কটিতটে, স্তনাগ্রচূড়ায়/বাহুযুগে, সিক্তদেহে রেখায় রেখায় ঝলকে ঝলকে। রবীন্দ্রনাথ অনেকটাই ঋণী বোদলেয়ারের কাছে।

বোদলেয়ার মদ নিয়ে চারটি অসামান্য কবিতা লিখেছিলেন, ‘ন্যাকড়া-কুড়ুনির মদ’, ‘খুনের মদ’, ‘নিঃসঙ্গ মানুষের মদ’, ‘প্রেমিক প্রেমিকার মদ।’ [অনুবাদ : বুদ্ধদেব বসু]

‘খুনের মদ’ কবিতায় বোদলেয়ার বললেন, বৌটা মরে গেছে, আমি স্বাধীন/এবার যতো খুশি গিলবো খাঁটি। বোদলেয়ার পরবর্তী অনেক আধুনিক কবিই, তাঁদের কবিতায় মদের প্রসঙ্গ এনেছেন। আমি শামসুর রাহমানের একটি অসামান্য কবিতার উল্লেখ করবো। ‘এক ফোঁটা কেমন অনল’ কাব্যের, ‘এই মাতোয়ালা রাইত’ কবিতার শুরুতেই শামসুর রাহমানের নায়ক বলছে, হালায় আজকা নেশা করছি বহুত। রাইতের লগে দোস্তি আমার পুরানা/কান্দুপট্টির খানকি মাগির চক্ষুর কাজলের টান এই মাতোয়ালা রাইতের তামাম গতরে/…আবে, কোন্ মামদির পো সামনে খাড়ায়? অসামান্য এই কবিতাটির অনুপ্রেরণা শামসুর রাহমান, বোদলেয়ার থেকেই পেয়েছিলেন।

বোদলেয়ার বাংলা সাহিত্যের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছেন তার দুটো অভিনব উদাহরণ আমি তুলে ধরছি। বোদলেয়ার, ‘বিড়াল’ নামে একটি অসামান্য কবিতা লিখেছিলেন ‘ফ্ল্যর দ্যু মালে।’ জীবনানন্দ দাশও ‘বিড়াল’ নামে কবিতা লিখেছেন ‘বনলতা সেন’ কাব্যে। মজার ব্যাপার হল, বোদলেয়ার কবিতার শুরুতেই বলছেন, আমার মাথায় চলে তার আনাগোনা/আর জীবনানন্দ কবিতার শুরুতেই বলছেন, সারাদিন একটা বিড়ালের সঙ্গে ঘুরে ফিরে কেবলি আমার দেখা হয়। বোদলেয়ারের, ‘ইকারুস-বিলাপ’ কবিতাটি সরাসরি শামসুর রাহমানকে অনুপ্রাণিত করেছিল তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘ইকারুসের আকাশ’ লিখতে। উল্লেখ্য, ‘ইকারুসের আকাশ’ শামসুর রাহমানের একটি বিখ্যাত কবিতার বইয়ের নাম। হুমায়ুন আজাদের ওপর বোদলেয়ারের প্রভাব সুস্পষ্ট, বোদলেয়ারের নামে তিনি কবিতা লিখেছেন।

মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে মদ ও দারিদ্র্যে মৃত্যু হয়েছিল এডগার এলান পোর। পোর মৃত্যু বোদলেয়ারকে কষ্ট দিয়েছিল। পোর অনুবাদক হিসেবেই নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন বোদলেয়ার। আরো একজন ফরাসি কবির কাছে বোদলেয়ারের ঋণ রয়েছে কিছুটা, তিনি নের্ভাল। জীবনের শেষ দিকে বোদলেয়ার নিজেকে নের্ভাল ভাবতেন। তবে কাউকেই অনুকরণ করেননি বোদলেয়ার। বোদলেয়ারের সমস্ত কবিতা তাঁর নিজেরই চেতনার অভাবিত প্রকাশ। তাঁকে আমি আধুনিক কবিতার পিতা বলছি এই নিজস্ব মৌলিকতার জন্যেই। বাংলা সাহিত্যের একমাত্র বুদ্ধদেব বসু ছাড়া আর কোনো সমালোচকই তাঁকে ঠিকমতো চিনে উঠতে পারেননি।

বোদলেয়ার নরকেই বাস করতে চেয়েছিলেন, যদিও রোমান্টিক স্বর্গে তাঁর বিশ্বাস ছিল। রোমান্টিকেরা যেখানে আত্মকরুণা করেন বোদলেয়ার সেখানে করেছিলেন আত্মপরীক্ষা। রোমান্টিকেরা দোষ দেন অন্যদের, বোদলেয়ার দোষ দিয়েছেন নিজেকে। বোদলেয়ার পাপের ভেতর পেয়েছিলেন সৌন্দর্যের বাতিঘর। দুঃখ আর পাপ থেকে নিঙড়ে বের করলেন অভাবিত সুন্দরকে। বোদলেয়ার বলেছিলেন, ‘হে আমার দুঃখ, তুমি প্রাজ্ঞ হও।’ শেলি, বায়রন, কীটস, এলিয়ট, ইয়েটস, রবীন্দ্রনাথ এভাবে বলতে পারেননি। ভের্লেন, বোদলেয়ারকে ‘মহাকবি’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ‘ক্লেদজ কুসুম’ ও ‘প্যারিস চিত্র’ পড়ে আমার মনে হয়েছে পৃথিবীর সকল আধুনিক শিল্পকলা ও চিত্রশিল্প বোদলেয়ারের কাছে কমবেশি ঋণী। বোদলেয়ার তাঁর সীমাবদ্ধ সময়কে দান করে গিয়েছেন অসীমাবদ্ধতার স্বাদ।

বিজ্ঞাপন
মামুনুর রশিদ

মামুনুর রশিদ

মামুনুর রশিদের জন্ম ১৯৮৩ সালের ১৮ ই মে, কুষ্টিয়ার নিয়ামত বাড়ি গ্রামে। মামুনুর রশিদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় কুষ্টিয়াতেই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বি এ অনার্স ও এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। সিলেট এবং ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতার পর বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিষয়ে শিক্ষকতা ক'রছেন। শার্ল বোদলেয়ার এবং জীবনানন্দ দাশের কবিতা চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বর্তমানে জীবনানন্দ দাশের ওপর পরিপূর্ণ বই লিখছেন।।

লেখকের অন্যান্য লেখা

জীবনানন্দের মৃত্যু : একাকিত্ব ও অস্তিত্ব সংকটের মিশ্রণ
প্রবন্ধ

জীবনানন্দের মৃত্যু : একাকিত্ব ও অস্তিত্ব সংকটের মিশ্রণ

আগস্ট ১, ২০২০

বিজ্ঞাপন


সদ্য প্রকাশিত

নেয়পায়াসাম
অনুবাদ

নেয়পায়াসাম

আদনান সহিদ
অক্টোবর ২২, ২০২০
0

[মালায়লাম ভাষার শীর্ষ কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে কমলা দাস (১৯৩৪-২০০৯) অন্যতম। তাঁর জন্ম কেরালার দক্ষিণ মালাবারের পুণ্যাউরকুলামের এক রক্ষণশীল পরিবারে। বাবার চাকুরিসূত্রে শৈশবের...

যতীনের লোক-জ্যোতি

যতীনের লোক-জ্যোতি

অক্টোবর ১৮, ২০২০
‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’ : একটি উত্তর উপনিবেশীয় বিশ্লেষণ

‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’ : একটি উত্তর উপনিবেশীয় বিশ্লেষণ

অক্টোবর ১০, ২০২০
ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা

ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
বিষজন্ম বিষমৃত্যু

বিষজন্ম বিষমৃত্যু

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
কেঁদেও পাবে না তাকে

কেঁদেও পাবে না তাকে

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

এ মাসের সর্বাধিক পঠিত

ঢোঁড়াই চরিত মানস : প্রান্তিক মানুষের জীবনালেখ্য ও অধিকার-সচেতনার গল্প
বইকথা

ঢোঁড়াই চরিত মানস : প্রান্তিক মানুষের জীবনালেখ্য ও অধিকার-সচেতনার গল্প

সাফি উল্লাহ্
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
0

জীবন অন্বেষী ভারতীয় ঔপন্যাসিক সতীনাথ ভাদুড়ী (১৯০৬-১৯৬৫) রচিত অল্প-পঠিত অথচ বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলীতে অনন্য উপন্যাস ‘ঢোঁড়াই চরিত...

শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

জুলাই ১, ২০২০
জালাল উদ্দিন রুমির কবিতা

জালাল উদ্দিন রুমির কবিতা

জুলাই ২৯, ২০২০
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায় অভিশাপ’ : উপেক্ষিত প্রাচ্য পুরাণ এবং একটি বিতর্কিত বিনির্মাণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায় অভিশাপ’ : উপেক্ষিত প্রাচ্য পুরাণ এবং একটি বিতর্কিত বিনির্মাণ

জুলাই ৯, ২০২০
রক্তের কিংবা বীর্যের স্রোত

রক্তের কিংবা বীর্যের স্রোত

আগস্ট ২১, ২০২০
বিজ্ঞাপন
লেখা পাঠানোর ঠিকানা ও যোগাযোগ
pratiswik2020@gmail.com
অলংকরণ : মাকসুদুল হাকিম

প্রকাশিত লেখার বক্তব্য সম্পর্কিত দায় সংশ্লিষ্ট লেখকের

Design by OneHost BD ©2020 সর্বস্বত্ব সংরক্ষণকারী প্রাতিস্বিক

কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ

© 2020 সর্বসত্ব সংরক্ষকারী প্রাতিস্বিক.