Pratiswik
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
Pratiswik
কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
OneHost BD
হোম অন্যগদ্য
হারিয়ে যাওয়া রিসার্চ পেপার

হারিয়ে যাওয়া রিসার্চ পেপার

সরকার আব্দুল মান্নান সরকার আব্দুল মান্নান
আগস্ট ১, ২০২০
বিভাগ : অন্যগদ্য, বিশেষ সংখ্যা
55
Views
ফেসবুকটুইটারহুয়ার্ট্সঅ্যাপলিংকইন্ডই-মেইল

জগদীশ গুপ্তের কথাসাহিত্য নিয়ে হায়াৎ মামুদ স্যারের তত্ত্বাবধানে এমফিল-এর কাজটা তখন পুরোদমে চলছে। চার-পাঁচটি চ্যাপ্টার লেখা শেষ। কাপাসিয়া থেকে ঢাকা এসেছি। উচ্চ নম্বরের সিঁড়ি প্রকাশনার মালিক জিএম শাহজাহান ভাইকে লেখা পৌঁছে দেব। বিএ ক্লাসের জন্য গাইড বইয়ের লেখা। রাতে আজিমপুরে বিপ্লবদের বাসায় থাকবো এবং পরদিন সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হায়াৎ মামুদ স্যারের হাতে চ্যাপ্টারগুলো পৌঁছে দিয়ে ওই পথেই কাপাসিয়া ফিরবো।

আজিমপুর থেকে লক্করঝক্কর মার্কা একটি ভাঙা বাসে চড়ে গাবতলী এসে নামলাম। গাবতলী থেকে যে গাড়িতে আরোহণ করলাম উহাকে লক্করঝক্কর মার্কা বললেও কম বলা হবে। মুড়ির টিন বলে পরিচিত একদম ভাঙা গাড়ির চেয়েও খারাপ। তার ওপর ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। একটি পলিথিন ব্যাগে আমার গবেষণাপত্রগুলো। আমি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার বাঁদিকে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ টেট্টনের সাদা লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরে বসা। কৌটা থেকে নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর মুখে পান পুরছে। আর তার পাশে বসা মহিলাকেও দিচ্ছে। মহিলার বয়স তার চেয়েও বেশি হবে। দেবর-ভাবী সম্পর্কজাত আড্ডা দিয়ে ও ঠাট্টামস্করা করে যাচ্ছে দুইজন সমানে। ড্রাইভার মাঝেমধ্যে ব্রেক কষে। খুব আকস্মিকভাবে কেন তাকে ব্রেক কষতে হয় জানি না। আর যাত্রীগণ সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ড্রাইভার এবং হেল্পারদের যাচ্ছে তাই গালাগাল দেওয়ার একটা সংস্কৃতি আমাদের দেশে আছে। খুবই পুরনো সংস্কৃতি। এই বাসের যাত্রীরাও ড্রাইভারকে ধুমছে গালাগাল দিয়ে যাচ্ছে। আর ড্রাইভাররাও প্রতিনিয়ত এইসব গালাগাল শুনে এতই অভ্যস্ত যে এতে তারা মোটেই মাইন্ড করে না। অধিকন্তু এইসব মধুসম্ভাষণ না হলে তারা যেন শরীরে জুইত পায় না। ড্রাইভার তার মতোই গাড়ি চালিয়ে যেতে লাগলো। এই সময় ওই টেট্টন লুঙ্গি সদাশয় লোকটি আমাকে বললো, ‘আমনের ব্যাগটা আমার আতো দিয়া জুইত কইরা খাড়ন। পইড়া যাইতেছন তো বারবার।’

একটু দ্বিধা হলেও তার হাতে ব্যাগটি দিয়ে ‘জুইত কইরা খাড়ইলাম।’ এবং ঘণ্টা খানেক পরে যথারীতি আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে নেমে গেলাম।

প্রান্তিক গেটে নেমে কোনো প্রাক্তন ছাত্র যদি চা-সিগারেট না খায় তা হলে সে ডেইরিফার্ম গেটে নামলেই পারে। কিংবা সে ওই জাতের ভদ্রলোক যে হল, ক্যান্টিন আর ক্লাস ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কিছুই চিনে না কিংবা ওই তিনটি স্থান ছাড়া অন্যত্র আড্ডাকে ফালতু সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই ভাবে না। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি ওই জাতের ছাত্র ছিলাম না। ওই জাতের শিক্ষকও হতে পারিনি।

কয়েকজন অনুজের সঙ্গে চা-সিগারেট পর্ব শেষ করে আমার মনে হলো গত দুই বছরে গবেষণাকর্ম টেট্টন লুঙ্গি লোকটির কাছে রেখেই আমি নেমে পড়েছি। একশ পৃষ্ঠার ওপরে লেখা হারিয়ে ফেলে থুক্কু দিয়ে আবার লিখতে বসে যাবো, সেই ধৈর্য, সুস্থিরতা ও সক্ষমতা কিছুই আমার নেই। সুতরাং আমার উচ্চ শিক্ষার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখানেই শেষ হলো।

আমার নামেই একজন দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মিতা, ঘটনা তো একখান ঘটে গেলো। কী করা যায়।’

মান্নান আবহাওয়াবিদদের মতো ‘সম্ভাবনা আছে’, ‘হতে পারে’, ‘সম্ভাবনা নেই’ এরকম অনিশ্চয়তাবাচক কোনো কথা না বলে সোজা বললো, ‘মান্নান ভাই, আপনার রিচার্স পেপারগুলো পাবেন। এই বাসটার শেষ স্টপেজ নবীনগর। আপনি সোজা নবীনগর চলে যান। পেয়ে যাবেন।’

আমি নবীনগর চলে গেলাম। ওই পুরুষ ও মহিলাকে খুঁজতে লাগলাম। গাড়ি থেকে নেমে এই শ্রেণির মানুষের গতিবিধির একটা গড়ন সম্পর্কে আমি চিন্তা করতে লাগলাম। যারা প্রচুর পান খায় তাদের চা ও সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস থাকে। আমি বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি চায়ের দোকানে ওনাদের খুঁজতে লাগলাম। এমনই একটি টংয়ের দোকানে মহিলাকে আমি পেয়ে গেলাম। আমার মনে হলো, পেয়ে গেলাম! আশ্চর্য। এ যেন একদম পেয়ে যাওয়া একটি ব্যাপার হলো। আমার নিরন্তর দুই বছরের সাধনা নয়।

আমি মহিলাকে বললাম, ‘চাচি, একটু আগে আপনে ঢাকা থেকে আইছেন না…।’ আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই সে বলল, ‘বাবা, আমনের ব্যাগটা তো রইস মিয়ার দোকানে। আমনে কোন সময় নাইম্মা গেলেন। দেখলাম না তো। গাড়ির থিকা নাইম্মা অনেকক্ষণ আমনের লইগা খাড়ইয়া আছিলাম।’

রইস মিয়ার লুঙ্গির দোকান খুঁজে পাওয়া গেলো। সে তার ছেলেকে দিয়ে ব্যাগটি গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।

মানুষের নির্বুদ্ধিতা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। যেখানে তার দোকানটি হলো সবচেয়ে নিরাপদ এবং সহজলভ্য সেখানে কোন বুদ্ধিতে ব্যাগটা সে গ্রামে পাঠিয়ে দিলো তা কিছুতেই আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

তার নির্দেশনা মতো আমি ধলেশ্বরী নদীতে গিয়ে নৌকায় উঠলাম। প্রায় এক ঘণ্টা লাগলো ওই বাড়িতে পৌঁছাতে।

নৌকায় উঠে আমি খুব প্রশান্তি বোধ করতে লাগলাম। ক্ষীণ স্রোতের স্বচ্ছতোয়া জলের নদী। চিরকালের প্রশান্তি, সুস্থিরতা আর মমত্ববোধ নিয়ে এই জল যেন অনন্তকাল ধরে তৃষ্ণার্ত বঙ্গভূমিকে পরিতৃপ্ত করে আসছে। আর জেলে, কৃষক, ব্যবসায়ী, গৃহবধূ ও দুরন্ত শিশুদের কত বিচিত্র জীবন যে এই জলের সঙ্গে প্রবাহিত হয়ে চলছে তার কী কোনো ইয়ত্তা আছে! অনেক দিন পরে নদীর দুই পাড়ের অফুরন্ত সৌন্দর্যের সঙ্গে আবার আমি চলতে লাগলাম। শৈশবে বাবার সঙ্গে, চাচাদের সঙ্গে, বড়ো ভাইদের সঙ্গে কতবার আমি নৌকায় চড়েছি। বাজারে গিয়েছি, আম কাঁঠাল ইলিশ মাছ মিষ্টি নিয়ে ভাই-বোনদের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছি, আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। তখন ওই খালের, বিলের, নদী তীরের যত বৃক্ষ যত লতা-পাতা ঝোপঝাড় সবকিছুকেই মনে হতো জীবন্ত। খুব অযত্নে শুকনো খালে খুব করে যে ঘাঘরায় ছয়লাপ হয়ে যেত তার ফুলটা, কাঁটাওয়ালা বিচিটা কী যে মূল্যবান ছিলো! আর বাঁশঝার থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে বেরিয়ে আসা বেজিটা যখন আমাদের একদম কাছে দিয়ে দ্রুত কোথায় গিয়ে লুকাতো তখন মনে হতো পৃথিবীতে এর চেয়ে আশ্চর্যের আর কিছু হতে পারে না।

এখন আর বাঁটফুল নিয়ে, আসশেওড়া নিয়ে, ঘাঘরার বিচি নিয়ে, হাতিশুঁড় নিয়ে খেলি না। কোথায় গেলো শাপলা শালুক পদ্ম আর কোথায় বা গেলো হিজল, সোনালু, চালতা আর কড়ই ফুল। এই ধলেশ্বরীর জলে শৈশবের সেই প্রাণের কোলাহল শুনতে শুনতে এগুয়ে যেতে যেতে বিস্তীর্ণ দুই পাড়ের অসংখ্য ঝোপঝাড় ও বৃক্ষরাজির গোপন এক আহ্বান যেন আমার অস্তিত্ব জুড়ে বিস্তার লাভ করছিল। নদীর একদম পারে ছাতিম গাছটির মগডালে বসে যে সাদা বকটি দোল খাচ্ছিল কতদিন পরে ওর সঙ্গে দেখা হলো আমার। সেই কবে ডাহুকের পেছনে, বকের পেছনে, কাক আর শকুনের পেছনে দৌড়িয়েছি। ওরা আমাদের একদমই পাত্তা দিতো না। খুবই অবহেলা করে একটু উড়াল দিয়ে কয়েক হাত দূরে গিয়ে বসতো এবং আবার আমাদের দিকেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে আসতো। ঘুমের মধ্যে রাত কেটে গেলেও প্রকৃতির এই বিপুল আপনজনদের ছাড়া দিন কিছুতেই কাটতো না। অথচ সেই আমি কীভাবে যেন সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। সবই আছে অথচ কিছুই নেই। নেই যে তা ভাববারও সময় নেই। বহুদিন পরে ধলেশ্বরীর স্নিগ্ধ জলের ছোটো ছোটো ফুল, ঢেউ ভেঙে ভেঙে মিষ্টি এক ধ্বনিময়তার মধ্যে আমি ফিরে পেলাম আমার বিপুল প্রাণের শৈশব।

সম্বিৎ ফিরে পেলাম মাঝির চিৎকারে। ‘কই যাইবেন ভাই? ওই তো পোড়াবাড়ি বাজার। রইস দালালের বাড়ি ওই মসজিদটার পাশে।’

রইস মিয়ার লুঙ্গির দোকানের খোঁজ এর মধ্যেই পেয়েছি। সে কাপড়ের ব্যবসায়ী। এখন তার আরেকটি পরিচয় পাওয়া গেলো, সে দালাল। কিন্তু কীসের দালালি করে রইস মিয়া তা আর জানার সুযোগ হলো না। আমাকে নেমে যেতে হলো ধলেশ্বরীরর পারে একটি পুরোনো হিজল গাছের গোড়ায়।

ওই বাড়িতে গিয়ে আমি হতভম্ব। নদীর পাড়ে বিচ্ছিন্ন একটি বস্তি যেন বাড়িটি। দোচালা ছনের একটি ছোটো ঘর। তার পাশে একচালা ছনের ছাউনি। চারদিক উদাম। ওর ভেতরে একটি মাটির চুলা। ওই ছাউনির নিচে গর্তের মতো জায়গায় আরাম করে একটি কুকুর ঘুমাচ্ছে আর দুটি ছাগলছানা কুট কুট করে খড়বিছালি চিবোচ্ছে। ঘরের সঙ্গে লাগোয়া কয়েকটি বাঁশের খুঁটি। ওই খুঁটির সামনে একটি মাঝারিগোছের নান্দার (মাটির গামলা) মধ্যে ভাতের মার আর কুটিকুটি করে কাটা কলাগাছের ডগা ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। গোরুর এই জলখাবার কবে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। শুধু পচা ও বাসি গন্ধে চারদিকটা নষ্ট হয়ে আছে। পাশেই একটি বাঁশের আড়ার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তেলচিটকানো দুটি কাঁথা, মরচের দাগ ও তিল পড়া একটি পুরোনো শার্ট। একটি ছেড়া লুঙ্গির অর্ধেক ওই নান্দার মধ্যে পড়ে আছে। একটি মুরগি আট-দশটি ছানা নিয়ে কিতকিত কিতকিত করে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর এখানে ওখানে ঠোকর দিয়ে ছানাদের দিকে খাবার এগুয়ে দিচ্ছে। কয়েক বার আমি ডাকলাম বাড়িতে কেউ আছেন কি না। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। একটু উঁকি দিয়ে দেখেই বুঝতে পারলাম যে ওই ছোটো ছনের ঘরটিতে কেউ নেই। আমার সন্দেহ হচ্ছে, এই বাড়ি ওই রইস মিয়ার হতে পারে না কিছুতেই।

জনশূন্য এই বাড়িটিতে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। বিচিত্র গন্ধের যে ককটেল তৈরি হয়েছে, অভ্যস্তদের জন্য তা নিশ্চয়ই নেশাকর। কিন্তু আমার মতো আগন্তুকের জন্য তা অসহ্য। সুতরাং একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। নদীর তীরে পশ্চিমে তাকিয়ে দেখি একটি করঞ্চা গাছ। আমি যতটুকু জানি করঞ্চা নিম্নাঞ্চলের উদ্ভিদ। আমাদের চাঁদপুরে এই ঘনবদ্ধ পাতায় সমৃদ্ধ মনোরম গাছটি খুব দেখা যায়। উত্তরের এই উষ্ণ অঞ্চলে করঞ্চা বিরল গাছ। নদীর তীর ঘেঁষে এই বিরল করঞ্চা গাটির নিচে গিয়ে আমি দাঁড়ালাম এবং ওই বাড়িটির দিকে লক্ষ রাখতে লাগলাম।

অনেকক্ষণ পরে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের একজন মহিলা একটি ছাগল ও একটি মেয়ে শিশু টানতে টানতে ওই বাড়িটির দিকে আসছিল। ছাগলটি অকাশ বিদীর্ণ করে বে বে করছিল আর মেয়ে শিশুটি কথা আর কান্না একাকার করে মহিলার হাত থেকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এরই মধ্যে মেয়েটি তার মুক্ত বাঁ হাত দিয়ে একটি ঢিল ছুড়ে মারলো নদীতে ভাসমান এক ঝাঁক হাঁসের দিকে। ক্ষীণ স্রোতের প্রতিকূলে মন্থর গতিতে এই আনন্দভ্রমণে আকস্মিক ঢিল এসে পড়ায় ওরা চমকে যায় এবং একসঙ্গে সবাই লাফিয়ে ওঠে পানিতে আলোড়ন তৈরি করে। সেই দৃশ্য দেখে শিশুটি ফিক করে হেসে দেয়। কথা আর কান্নার মধ্যে এমন হাসি যে দেখেনি পৃথিবীতে তার দেখবার অনেক কিছুই বাকি আছে। ওই হাসির মধ্যে আমি পৃথিবীর সব রূপ অনুভব করলাম। আমার মনে হলো, এমন সুন্দর হাসি যে বাড়িতে নিত্য ফোটে সেই বাড়ির চেয়ে সুন্দর বাড়ি আর কোথাও নেই।

আমি ওই বাড়িতে গেলাম এবং মহিলার কাছে বিস্তারিত বললাম। মহিলা বললো, ‘হ হ, পোলাডা আইছে। ওই যে, ওই বিল্লালেগো বাইত। অর আতো একটা পেলাস্টিকের ব্যাগ আছে। আইয়া পরব এহনই।’

আমার আর অপেক্ষা সয় না। ক্ষুধায় মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এখন ব্যাগটি পেয়ে গেলেই প্রস্থান করতে পারি। ভালোমন্দ যাই হোক, প্রান্তিকে গিয়ে খাওয়া যাবে।

পাতলা সুতি কাপড়ের হাফ প্যান্ট পরা ছোটো মেয়েটি আমার কাছাকাছি ঘুরছে। তার হাঁটু অবধি চুল। প্রগাঢ় কালো চোখ। পৃথিবীর সব কৌতূহল আর মায়া আর আনন্দ যেন ওই চোখ দুটিতে এসে ভর করেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমার নাম কী সোনা?’

সে নাম না বলে লজ্জার হাসি হেসে আমার থেকে আর একটু দূরে ছাগল ছানা দুটির কাছে চলে গেলো।

আমি বললাম, ‘বাহ্, তুমি তো অনেক মিষ্টি মেয়ে। তোমার চুলগুলো এত সুন্দর। আর তোমার হা…’

আমার কথা শেষ করতে পারলাম না। মেয়েটি বললো, ‘আমার নাম বুতি।’

ফোকলা দাঁতের মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে সে যখন খেতের দিকে আল বরাবর দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনই ঘর থেকে ডাক আসে, ‘বুতি বুতি, তোর ভাইয়েরে ডাককা লইয়া আয়।’

কিন্তু বুতির আর যেতে হয় না। ঘরের পেছন থেকে স্বর ভাঙা গলায় একজন কিশোর মাকে ডেকে বলছিল, ‘মা মা, বেডায় কই।’ আপাদমস্তক বৈশিষ্ট্যহীন ওই কিশোরের হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে বুতির হাতে বিশটি টাকা পুরে দিয়ে আমি প্রস্থান করি।

নয়ার হাট বাজারে রইস মিয়ার বড় লুঙ্গির ব্যবসা। পোশাক-পরিচ্ছদে ও শরীর-স্বাস্থ্যে রইস মিয়ার মধ্যে অবস্থাসম্পন্ন মানুষর পরিচয় আছে। কিন্তু ঘরবাড়ি, স্ত্রী ও পুত্র-কন্যার মধ্যে চরম দারিদ্র্য। এর পেছনে অন্য কোনো জীবন আছে নিশ্চয়। সেই জীবনের পরিচয় আমার জানা নেই। আমার উচ্চশিক্ষার উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে রক্ষা পেলো এতেই আমি আনন্দিত।

OneHost BD
সরকার আব্দুল মান্নান

সরকার আব্দুল মান্নান

১৯৬৪ সালের ২১ জুলাই চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার জহিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গবেষক, লেখক সরকার আবদুল মান্নান রচিত আলোচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো : ‘উপন্যাসে তমসাবৃত জীবন নরেশচন্দ্র সেন গুপ্ত, জগদীশ গুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়’, ‘জগদীশ গুপ্তের রচনা ও জগৎ’, ‘শিক্ষা ও স্বদেশচিন্তা’, ‘কবিতার রূপকল্প ও আত্মার অনুষঙ্গ’, ‘গল্পের আল্পনা’, ‘কবিতার স্থাপত্যরীতি ও অন্যান্য প্রবন্ধ’, ‘বাংলা কথাসাহিত্য আধুনিকতার কুশীলব’ অন্যতম। শিশুসাহিত্যের প্রতি রয়েছে তাঁর বিশেষ দুর্বলতা। তাঁর লেখা শিশুতোষ গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে : দুষ্টু রাজকুমার ও অন্যান্য গল্প, জলের সঙ্গে শৈশব, কাক ও পুতুলের গল্প, ইঁদুর শিকারি ডুরি, পালতোলা নৌকা, জ্যোছনা রাতে ভূত, গল্পগুলো চিরকালের (সম্পাদিত), চিল ও মুরগীর ছানা।

লেখকের অন্যান্য লেখা

বিজ্ঞাপন


সদ্য প্রকাশিত

রাত জাগার বৃত্তান্ত : যন্ত্রণা কিংবা মাদকতা
মুক্তগদ্য

রাত জাগার বৃত্তান্ত : যন্ত্রণা কিংবা মাদকতা

শামসুল কিবরিয়া
সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১
0

ঘুমে চোখ জড়াতে জড়াতে হঠাৎ ভেঙে যায়, কোনোদিন বা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে করতেও ঘুম আসে না। নিত্যদিনের সংঘাতময় নাগরিক...

কাফকার ‘রূপান্তর’ : সমকালের নিরিখে পাঠ

কাফকার ‘রূপান্তর’ : সমকালের নিরিখে পাঠ

জুলাই ৩১, ২০২১
অভ্র আরিফের কবিতাগুচ্ছ

অভ্র আরিফের কবিতাগুচ্ছ

জুলাই ২৪, ২০২১
‘তোমারে যা দিয়েছিনু তা তোমারি দান; গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।’

‘তোমারে যা দিয়েছিনু তা তোমারি দান; গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।’

জুলাই ১৫, ২০২১
বিচিত্র স্বাদের গল্প : ‘বাইরে যার হাসির ছটা ভিতরে তার চোখের জল’

বিচিত্র স্বাদের গল্প : ‘বাইরে যার হাসির ছটা ভিতরে তার চোখের জল’

জুলাই ১৪, ২০২১
আলো ছায়ার খেলা

আলো ছায়ার খেলা

জুলাই ১১, ২০২১
OneHost BD

এ মাসের সর্বাধিক পঠিত

ঢোঁড়াই চরিত মানস : প্রান্তিক মানুষের জীবনালেখ্য ও অধিকার-সচেতনার গল্প
বইকথা

ঢোঁড়াই চরিত মানস : প্রান্তিক মানুষের জীবনালেখ্য ও অধিকার-সচেতনার গল্প

সাফি উল্লাহ্
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
0

জীবন অন্বেষী ভারতীয় ঔপন্যাসিক সতীনাথ ভাদুড়ী (১৯০৬-১৯৬৫) রচিত অল্প-পঠিত অথচ বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলীতে অনন্য উপন্যাস ‘ঢোঁড়াই চরিত...

শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

শার্ল বোদলেয়ার : আধুনিক কবিতার পিতা

জুলাই ১, ২০২০
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায় অভিশাপ’ : উপেক্ষিত প্রাচ্য পুরাণ এবং একটি বিতর্কিত বিনির্মাণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায় অভিশাপ’ : উপেক্ষিত প্রাচ্য পুরাণ এবং একটি বিতর্কিত বিনির্মাণ

জুলাই ৯, ২০২০
নিছক গল্প নয়, জীবনের আধার রূপকথা

নিছক গল্প নয়, জীবনের আধার রূপকথা

আগস্ট ২২, ২০২০

ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ : নিষিদ্ধ কামনার ভিন্ন উপস্থাপন

জুলাই ৬, ২০২০
OneHost BD
লেখা পাঠানোর ঠিকানা ও যোগাযোগ
pratiswik2020@gmail.com
অলংকরণ : মাকসুদুল হাকিম

প্রকাশিত লেখার বক্তব্য সম্পর্কিত দায় সংশ্লিষ্ট লেখকের

Design by OneHost BD ©2020 সর্বস্বত্ব সংরক্ষণকারী প্রাতিস্বিক

কিছু পাওয়া যায়নি
সব লেখা দেখুন
  • হোম
  • লেখকসূচি
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্প
    • উপন্যাস
  • নাটক
  • প্রবন্ধ
  • বইকথা
  • গদ্য
    • মুক্তগদ্য
    • অন্যগদ্য
  • অনুবাদ
  • চলচ্চিত্র
  • চিত্রকলা
  • সাক্ষাৎকার
  • অনূর্ধ্ব ২৭
  • বিশেষ সংখ্যা
  • সাহিত্য সংবাদ

© 2020 সর্বসত্ব সংরক্ষকারী প্রাতিস্বিক.